আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে ২১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সে খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ সংবাদ কোন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশন করেছে, তার ভাষা কী ছিল, সে বিষয়ে কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। ভাষান্তর : মহসীন হাবিব  
বিবিসি : বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় ঘোষণায় একজন সাবেক ইসলামিস্ট নেতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তিন বছর আগে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধকালে অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারকার্য চালাচ্ছেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রথম এই রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তুরুপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তিনি তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে এই প্রসিকিউশনের ব্যবস্থা করেছেন।
শুরু থেকেই এই ট্রাইব্যুনালকে সংশয়ের চোখে দেখা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বছর ট্রাইব্যুনাল পত্রিকার দ্বারা একটি ঝাঁকি খায়। ফলে দুটি আদালতের একটির প্রধান বিচারককে পদত্যাগ করতে হয়। অবশ্য সরকার দ্রুতই একজন বিচারপতি নিয়োগ দেয় ও বিচারকাজ এগিয়ে নেয়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই বিচারে জনগণের ব্যাপক সাড়া রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গোলাম আযম ও সাঈদীর মতো সিনিয়র নেতাদের বিচারের রায় দ্রুতই ঘোষণা করা হবে।
দ্য ডন, পাকিস্তান : বাংলাদেশের বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধ আদালত সোমবার ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সময় গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধের দায়ে টেলিভিশনে শীর্ষ পর্যায়ের ধর্মপ্রচারকারীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে।
বাংলাদেশের সেক্যুলার সরকারের দ্বারা ২০১০ সালের মার্চ মাসে গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে একটি পুরো ইসলামী দলসহ বিরোধী দলের নেতাদের টার্গেট করার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। জামায়াত ও বিএনপি এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠনগুলো এই শুনানির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে এবং যুদ্ধাপরাধের আইনে ফাঁকফোকর দেখতে পেয়েছে।
এই বিচারের সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো পর্যবেক্ষণ বা সম্পৃক্ততা নেই এবং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মানের ঘাটতি রয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সোমবার একটি ট্রাইব্যুনাল মৌলবাদী দলের সঙ্গে যুক্ত এক ধর্মীয় নেতাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। জামায়াতে ইসলামীর সদস্য আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে তার পলাতক অবস্থায় এ রায় দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, গত এপ্রিল মাসে অভিযোগ গঠনের পর সে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে পৃথক হওয়ার জন্য বাংলাদেশের যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়।
কুয়েত টাইমস : একটি বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধ আদালত রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে অপরাধের দায়ে পলাতক বাংলাদেশের টেলিভিশনে ধর্মপ্রচারকারীকে সোমবার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালটি একটি অভ্যন্তরীণ বডি। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু সরকার ও সরকারের সমর্থকরা এই রায়কে উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছে। সাবেক মুক্তিযোদ্ধারা মিছিল করেছেন এবং বিজয়সূচক ভি চিহ্ন প্রদর্শন করেছেন।
ডেকান হেরাল্ড : পলাতক ইসলামী নেতা ও মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামীর সদস্যকে আজ (সোমবার) বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত বিশেষ আদালত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে ছয়জন হিন্দুকে হত্যা ও একাধিক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে। ধারণা করা হয়, সে এখন পাকিস্তানে পালিয়ে আছে। পূর্বেই জামায়াত এই বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছে এবং বিএনপি এই অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ায় আইনের ভেতর ফাঁক আছে বলে উল্লেখ করেছে।
সরকার বলেছে, এর অংশ হিসেবে প্রভাবশালী মহল বিচারকার্যকে দুর্বল করতে বাইরের দেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
গত মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়ে ক্ষমা প্রদর্শন বা সহানুভূতি প্রদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.