যুদ্ধাপরাধীর বিচারে রায় মাইলফলক ॥ বিবিসি

 জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা আবুল কালাম আজাদকে আটটি অভিযোগে তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এই প্রথম রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এক বিরাট বিজয়, কারণ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার করা তাঁর সরকারের এক প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন। তবে প্রায় তিন বছর আগে এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই যুদ্ধাপরাধীরের বিচারের ব্যাপারে দেশের ভেতরে যেমন এক ধরনের সংশয় কাজ করেছে, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থার তরফ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছর ট্রাইব্যুনালকে জড়িয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের পর দ্ই ট্রাইব্যুনালের একটির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন। তবে সরকার তড়িঘড়ি একজন নতুন বিচারপতি নিয়োগ করে এবং বিচার কাজ যথারীতি এগিয়ে যায়। ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে।
বিবিসি বাংলার সম্পাদক সাবির মুস্তাফা এক নিবন্ধে লিখেছেন, আবুল কালাম আজাদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পান। গত এপ্রিলে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং ধারণা করা হচ্ছে তিনি পাকিস্তানে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ তিনি সংঘটন করেন মূলত ফরিদপুর জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের নেতা এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্য। পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী সংগঠন হিসেবে এই বাহিনীর কাজ ছিল স্থানীয় পর্যায়ে যাতে কোন প্রতিরোধ গড়ে উঠতে না পারে তার চেষ্টা চালানো। রাজাকাররা মূলত টার্গেট করত হিন্দুদের এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল যে কোন বাঙালীকে। যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সোমবারের এই রায় বাংলাদেশের টালমাটাল ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে কারণ গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গণহত্যা ও ধর্ষণের শিকার পরিবারগুলো অপরাধীদের বিচারে সোপর্দ করার জন্য নিরলসভাবে প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর হাতে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যুদ্ধে ভারতের সরাসরি অংশগ্রহণের পর আলবদর বাহিনী দু’শ’র বেশি বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে হত্যা করে। আর এই আলবদর বাহিনী গড়ে তুলেছিল জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র কয়েকদিন আগে তৎকালীন জামায়াত নেতা গোলাম আযমের নির্দেশ ও অনুপ্রেরণায় এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। গোলাম আযম এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানী সেনাদের বিচার করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি কারণ দিল্লী ও ইসলামাবাদের মধ্যে এক ব্যাপকভিত্তিক চুক্তির অংশ হিসেবে ঐ সেনাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তানী বাহিনীর স্থানীয় দোসরদের বিষয়টি এবং গণহত্যায় তাদের ভূমিকা অনিষ্পন্নই থেকে গিয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.