চাকরি জাতীয়করণ হচ্ছে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর- কাল এক সমাবেশে ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি পূরণ হতে চলেছে। আগামী বুধবার সকালে রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে শিক্ষক সমাবেশ থেকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহাসমাবেশের মধ্য দিয়েই দেশের ২৪ হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণের প্রথম ধাপ শুরু হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মসূচী নিশ্চিত করে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। শিক্ষকদের কাছে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে জাতীয়করণ করার কাজ বাস্তবায়ন করা হবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে ৩০ শতাংশ, পরবর্তী বছর ৩৩ শতাংশ এবং পরের বছর বাকি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করেছিলেন। এবার তাঁরই মেয়ে এই বিশাল কাজটি করতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের ঘোষণার দিনক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা নানারকম পোস্টার ছাপানো শুরু করেছেন। বেসরকারী প্রাইমারি শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মোঃ মুনছুর আলী জানিয়েছেন, তাদের মহাসমাবেশে তাদের সংগঠনের উপদেষ্টা ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন ও প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এর আগে দীর্ঘ আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২৭ মে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণ করবেন- সরকারের এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা। টানা তিন দিন আন্দোলনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা। জানা গেছে, ১৯৯০ সালে বেসরকারী বিদ্যালয়গুলোকে রেজিস্টার্ড করা হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা হলো- ২৩ হাজার ৮৬০টি, যেখানে শিক্ষক আছেন ৯৫ হাজার ৪৪০ জন। শিক্ষার্থী প্রায় ৫৫ লাখ। শিক্ষকদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ১৫ হাজার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ৬৫ হাজার ৩০০, প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক আছেন ১৫ হাজার ১৪০ জন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে শিক্ষকরা সরকার থেকে শতভাগ বেতন পেতেন না। গত অর্থবছর থেকে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতনের শতভাগ পাচ্ছেন সরকারী তহবিল থেকে। তবে বাড়ি ভাড়া, উৎসব বোনাসহ বিভিন্ন ভাতার ক্ষেত্রে সরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের রয়েছে বিন্তর তফাৎ। এই বৈষম্য দূরীকরণেও দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের আন্দোলনের পেক্ষাপটে ২০১০ সালের জুলাই মাসে সরকারী ও বেসরকারী স্কুলগুলোর মধ্যে বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া ছাড়াও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ, অবস্থান র্ধমঘটসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন দীর্ঘ দিন ধরে। এমন এক প্রেক্ষাপটে গত বছর মে মাসে বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান সালাম মিয়া, সদস্য সচিব আবদুর রহমান বাচ্চু এবং যুগ্ম সদস্য সচিব মাহবুব আলমের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই বৈঠক শেষেই প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, দেশের রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষকদের এ দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে অন্তত ৫৮১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ সরকারের জন্য সহনশীল একটি প্রস্তাব হিসাবে তিন ধাপে জাতীয়করণ করার প্রস্তাব দেন সরকারের কাছে। তবে জাতীয়করণের ঘোষণা একবারই দিতে হবে। প্রথম বাজেটে বয়স ও যোগ্যতা অনুসারে প্রথম দিকের ৩০ শতাংশ, পরবর্তী বাজেটে ৩৩ শতাংশ এবং পরবর্তী বাজেটে বাকি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণে করতে হবে। শিক্ষকদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিন ধাপে নয় বরং দুই ধাপেই আমরা আপনাদের দাবি পূরণ করতে চাই। যদি অর্থ সংস্থান করা যায় তবে তাই হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের চাওয়া অনুসারেই তিন ধাপে জাতীয়করণের কাজ বাস্তবায়ন হবে। সকল প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা হবে এক সঙ্গেই বুধবারের মহাসমাবেশে।

No comments

Powered by Blogger.