শিক্ষক আন্দোলন

এমপিওভুক্ত বেসরকারী হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ। তাঁরা ঢাকায় সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন।
ইতোমধ্যে সরকার তাঁদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তা শিক্ষক আন্দোলনে কোন প্রভাব ফেলেনি। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের একাংশের নেতারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরও শিক্ষকদের বর্তমান আন্দোলন অবান্তর। ঐক্যজোট নেতাদের মধ্যেও আবার দ্বিধাবিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি এবং আন্দোলনকে রাজনীতিকরণের ইস্যুতে। বিভক্ত অংশের এক নেতা অভিযোগ তুলেছেন, ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান দাবিদার এক ব্যক্তি এই আন্দোলনে বিএনপি নেতাদের এনে পুরো আন্দোলনকে বিতর্কিত করে তুলেছেন। শিক্ষকদের স্বার্থে নয় বরং এই লোক নিজেকে বড় নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন ওই নেতা।
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের বর্তমান গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে চাকরি জাতীয়করণের দাবির আন্দোলনকে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক রূপ দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবেই এ আন্দোলনকে কাজে লাগাবার চেষ্টা স্পষ্ট হওয়ার পরই ঐক্যজোটে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং এই রাজনীতিকরণের ফলে চলমান আন্দোলনের মূল গতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিভক্ত অংশের নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ হোক, এতে নীতিগতভাবে কারও ভিন্নমত থাকার কথা নয়। কিন্তু সরকারের সামর্থ্যরে বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া প্রতিটি বিবেকবান নাগরিকেরই কর্তব্য। মাত্র ক’দিন আগেই সরকার দেশের ২৬ হাজারেরও বেশি প্রাইমারী স্কুলের লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেছে। শিক্ষার তৃণমূল স্তর হিসেবে প্রাইমারী শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়াটা ছিল সময়ের দাবি। এই ঘোষণার অব্যবহিত পরপর মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের বর্তমান আন্দোলন কতটা যৌক্তিক সে প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায়, সরকারের বর্তমান আর্থিক সামর্থ্যরে বিবেচনায় এই মুহূর্তে তাদের দাবি পূরণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তাই এ নিয়ে রাজনীতি না করে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নেয়া জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। এদিকে, দীর্ঘ আটাশ বছর পর সরকার প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করেছে, যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অপ্রতুল হলেও আগের তুলনায় অনেক বেশি। সময়ের বিবর্তনে ভবিষ্যতে এই ভাতা আরও বাড়বে; তাদের চাকরিও হয়ত একদিন জাতীয়করণ হবে। তবে সে জন্য সরকারকে সময় দেয়া প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে একটি জরুরী বিষয় হলো, সব বেসরকারী স্কুল-কলেজই জাতীয়করণের উপযোগী বা পর্যাপ্ত মানসম্মত নয়। জাতীয়করণের আগে এসব প্রতিষ্ঠান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইয়েরও প্রয়োজন আছে। এ কারণেও যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হবে; প্রয়োজন হবে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানেরও। এমতাবস্থায় শিক্ষক আন্দোলনকে রাজনৈতিক লেবেল লাগিয়ে নতুনতর বিশৃঙ্খলা ও অচলাবস্থার দিকে না নেয়াই সমীচীন। এতে শিক্ষার্থীসহ পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উল্লেখ্য, এস,এসসি পরীক্ষা সামনে রেখে ১৮ দিনের টানা শিক্ষক ধর্মঘট সোমবার স্থগিত ঘোষণা করেছে শিক্ষক ঐক্য পরিষদ।

No comments

Powered by Blogger.