চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক-টাকার অভাবে ছয় লেন হচ্ছে না! by একরামুল হক

বরাদ্দ না বাড়ানোয় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত অংশটি ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে না। চার লেন পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে প্রকল্প শেষ করা হবে।একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে এক বছর। এতে চট্টগ্রাম হয়ে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির মধ্যে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ১২৯ কোটি টাকার প্রকল্পে গত দুই বছরে মাত্র ১১ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে।


পর্যটন জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ছাড়াও রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভায় অক্সিজেন-হাটহাজারীর প্রকল্পটির কাজ চার লেন পর্যন্ত সম্প্রসারণে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছিল। এ কারণে সড়কের দুই পাশে জমি অধিগ্রহণ আর হচ্ছে না। ফলে সড়কের দুই পাশে ধীরগতির যান (স্লো মুভিং ভেহিক্যাল) চলাচলের জন্য আলাদা দুই লেন করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের দ্বিতীয় বছরে এখানকার জমির দাম প্রায় চার গুণ বেড়ে গেছে। সড়কের দুই পাশে জমি অধিগ্রহণ করে ছয় লেন করতে গেলে প্রকল্পের ব্যয় আরও ২০০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন ছিল ১২৯ কোটি টাকা। বাড়তি এই ব্যয় নির্বাহ করতে না পারার কারণে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ছয় লেন করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে। তবে এম এ সালাম বলেন, এই সরকারের মেয়াদেই চার লেনের কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলে যাত্রীদুর্ভোগ অনেক কমে আসবে।
সওজ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কে চার লেন করার জন্য ১২৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মাঝখানে দুই-আড়াই ফুটের সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) করা হচ্ছে। বিভাজকের দুদিকে ২৪ ফুট করে মোট সাড়ে ৪৮ ফুট প্রশস্ততা ধরা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বাজারে দেড় ফুট করে মোট তিন ফুট ফুটপাত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
সওজ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধীরগতির গাড়ির জন্য পৃথক লেন করার তাগিদ দেন। এ কারণে আবার জরিপ করে পৃথক বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় ঢাকায়। নতুন জরিপে রাস্তার প্রশস্ততা দুদিকে আরও সোয়া তিন ফুট করে মোট সাড়ে ছয় ফুট বাড়ানোর কথা ছিল। এ জন্য আরও ৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। তা অনুমোদন করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই টাকায় আর কাজ হচ্ছে না। ফলে রাস্তার ওই দুই লেনও আর হচ্ছে না।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এখন সময় ধরা হয়েছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। দুটি অর্থবছরে আমরা ১১ কোটি টাকা পেয়েছি। চলতি অর্থবছরে আরও ২০ কোটি টাকার জন্য তাগাদা দিয়েছি। টাকা পেলেই কাজ দ্রুতগতিতে চলবে।’
গাড়ি চলাচল: রানা বড়ুয়া বলেন, সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এই সড়কে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করে; যার মধ্যে বড় গাড়ির সংখ্যা ৫৫ শতাংশ।
গাড়ির চালকেরা জানান, রাস্তার কাজ ধীরগতিতে চলায় সড়কটিতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। সড়কের দুই পাশে মাটি সরিয়ে নেওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সড়কের কোথাও কোথাও গাড়ির গতি কমিয়ে ১০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনতে হচ্ছে। রাস্তাটি এত সরু যে কম গতির গাড়িও পাশ কাটানো (ওভারটেক) যায় না।
সাহাবউদ্দিন নামের এক বাসচালক বলেন, ‘উন্নয়নকাজ চলার কারণে এখন ৩৫-৪০ মিনিটের এই পথ পাড়ি দিতে দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বড়দীঘির পাড় এলাকায় যানজটে আটকা পড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা রাস্তা চওড়া করতে চার বছর লেগে গেলে দেশের অন্য উন্নয়নের কাজ হবে কীভাবে?’

No comments

Powered by Blogger.