'বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত' by মোঃ ইমাম হোসেন

বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত'_ এ দীপ্ত অঙ্গীকারে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের মণিপুর রাজ্যের ডিমাপুরে ব্রিটিশ সরকারের পরিত্যক্ত একটি বিমান ঘাঁটিতে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে। প্রাথমিক অবস্থায় এর নাম ছিল কিলো ফ্লাইট। সদস্যসংখ্যাও সে সময় খুব কম ছিল।


মাত্র ১০০ জনের মতো সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেই উত্তাল সময়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীরউত্তমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয় এ বাহিনীর যাত্রা। ভারতীয় বিমানবাহিনী এতে সহযোগিতা করে। সে সময় স্বাধীন দেশের জন্য রণাঙ্গন উত্তাল ছিল। সেপ্টেম্বরে রণাঙ্গনগুলোতে তীব্র যুদ্ধ চলছে। বিমানবাহিনী গঠন করার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন রণাঙ্গনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিমান সেনারা এসে যোগ দিতে থাকেন। বাড়তে থাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যসংখ্যা। যোগ দেওয়া সদস্যদের নিয়ে শুরু হয় অনুশীলন পর্ব। কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে দেশের আকাশ মুক্ত রাখার দীপ্ত প্রত্যয়ে প্রস্তুত হতে থাকেন দেশের অকুতোভয় সেনানীরা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কূটনৈতিক পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধে রূপদানের জন্য ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বিমান হামলা শুরু করে পাকিস্তান। ফলে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। ৩ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সঙ্গে আকাশযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একই সঙ্গে আক্রমণ শুরু করে। পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের তেল ডিপো ধ্বংস করে ঘাঁটিতে ফিরে যায়।
এ আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন যথাক্রমে ফ্লা. লে. বদিউল আলম বীরউত্তম এবং স্কো. লিডার সুলতান মাহামুদ বীরউত্তম, পরবর্তীকালে বিমানবাহিনী প্রধান হয়েছিলেন। পাকিস্তানিদের তেল শোধনাগার ধ্বংস হওয়ার ফলে তাদের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘি্নত হয়, যা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে সহায়তা করে।
প্রতি বছর বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা, বিশেষ করে সেনা-নৌবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনারারি কমিশন পেয়ে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এ বাহিনীর সদস্যরা অনারারি কমিশন পান না। একইভাবে জেসিও থেকে কমিশনপ্রাপ্তির সুযোগ সেনা-নৌবাহিনীতে আছে এবং তারা নিয়মিত পেয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে বিমানবাহিনীতে বিএলপিসি প্রথা থাকলেও ২০০৪ সালের পর থেকে তা বন্ধ আছে। বিষয়টি নিয়মিত চালু হোক_ এটিই বিমান সেনাদের প্রাণের দাবি।
 

No comments

Powered by Blogger.