চরাচর-মাগুরছড়া বিপর্যয়ের ১৪ বছর by দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন

আজ ১৪ জুন। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ১৪ বছর পূর্তি হলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী গ্যাস সম্পদ, বন ও পরিবেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। ১৯৯৭ সালের এই দিনের মধ্যরাতে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে মাগুরছড়া ১নং অনুসন্ধান কূপে খনন চলাকালে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।


প্রায় ৫০০ ফুট উপরে উঠেছিল সেই আগুনের লেলিহান শিখা। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ১৪নং গ্যাস ব্লকসহ রেলপথ, আশপাশের চা বাগান, সড়কপথ, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, খাসিয়াদের পানপুঞ্জি এবং বৈদ্যুতিক লাইন। বিপর্যস্ত হয় পরিবেশ। তখন অনেক চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল এই গ্যাসকূপটি। মাটির নিচে থাকা উত্তোলনযোগ্য প্রায় ২৪৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে নষ্ট হয়। তখন থেকে ছয় মাসেরও অধিককাল ধরে উদগিরিত গ্যাসের উৎসমুখ সিল করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরপরই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এক মাস অনুসন্ধান চালিয়ে ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর কাছে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, মার্কিন কম্পানি অঙ্েিডন্টালের খামখেয়ালির কারণেই বিস্ফোরণ ঘটে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বনাঞ্চলের ৬৫ দশমিক ৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণবয়স্ক নানা বিরল প্রজাতির বৃক্ষ আগুনে পুড়ে গেছে বলে হিসাব করা হয়। ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মাগুরছড়ার মোট ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছরই এই দিনটিতে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও তুলে ধরা হচ্ছে মাগুরছড়ার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। কিন্তু ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ও দুটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হলেও এর ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কেউ কোনো সুরাহা করতে পারেনি। উপরন্তু মার্কিন কম্পানি অঙ্েিডন্টালের শেয়ার হাত বদল হয়ে ইউনোকল ও সর্বশেষ শেভরন কম্পানিকে আবারও মাগুরছড়া গ্যাসকূপের ১৪নং ব্লকে নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়া হয়। মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া গ্যাসব্লকের অন্তর্গত এই গ্যাসক্ষেত্রটিও দেশের অর্থনীতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটাতে পারত। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অধ্যাপক এম শামসুল আলম ২০০৩ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট আবেদন (নং২৪৬১) দাখিল করেন। পরিবেশের ক্ষতিপূরণের জন্য ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে আরেকটি রিট আবেদন দাখিল করেছিল বেলা (বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি)। কিন্তু বর্তমানে অঙ্েিডন্টাল ও ইউনোকলের উত্তরসূরি শেভরন ও সরকারের কোনো উদ্যোগ বা আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আর চূড়ান্তভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হলে আমাদের যেতে হবে আন্তর্জাতিক কোর্টে। আন্তর্জাতিক কোর্টে শেভরনের করা হুইলিং চার্জের মামলায় বাংলাদেশেরই জয় হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি আদায় করতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।
দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন

No comments

Powered by Blogger.