হরতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত-শাসনের আইন নয়, আইনের শাসন কাম্য

দুই বিরোধী রাজনৈতিক দল ও তাদের সমমনা ১৩টি দলের ডাকে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল হয়ে গেল। এসব দলের হরতালে যেমনটি ঘটে থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হরতালের আগে বাস পোড়ানো হয়েছে। বাস পুড়েছে হরতাল চলাকালেও। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে।


বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল হরতালের দুই দিন। এবারের হরতালের আলোচিত ঘটনা ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতে শনিবার রাত ও রবিবার সারা দেশে ১১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এবারই প্রথম কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইন মেনেই ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও সংবাদ মাধ্যমকে একই কথা বলেছেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই রাজধানীতে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত একতরফাভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শাস্তি দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে এবারের হরতালে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
হরতাল বা যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমাদের সবারই কাম্য। কিন্তু দেখা যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অতিউৎসাহী কিছু নেতা-কর্মীর কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হরতালের আগে রাজধানীসহ সারা দেশে যে মিছিল-সমাবেশ হয়ে থাকে, সেগুলোর টার্গেট থাকে গণপরিবহন। আগের হরতালের মতো এবারও হরতালের আগের দিন এবং হরতালের দিনও রাজধানীতে বাস পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। এর আগে হরতালকে সামনে রেখে আমরা গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ডাদেশ দেওয়ার মতো ঘটনা এবারই প্রথম। হরতাল বা যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দণ্ডাদেশ দেওয়া কতটা যৌক্তিক, সেটা নিয়েই চলছে বিতর্ক। সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষে কথা বলবে_সেটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৯ সালে পাস করা ভ্রাম্যমাণ আইন ২০১১ সালে প্রয়োগ করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
হরতাল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। বিরোধী দলের এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সরকারকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা উচিত। ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ডাদেশ দিলে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়তো হবে, কিন্তু তার চেয়েও সেটা ভীতিকর হবে সাধারণ মানুষের জন্য। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে যারা যুক্ত, তাদের শায়েস্তা করতে গিয়ে যদি একজন নিরপরাধকেও দণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে সেটা হবে অন্যায়। তদুপরি এই ভ্রাম্যমাণ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ থাকে না। অতীতে তেমনটি দেখা গেছে। হরতালের আগে গণগ্রেপ্তারের সময় নিরপরাধ অনেক মানুষকে অযথা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতেই হরতালের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আইনের চেয়ে শাসনটাই প্রকট হয়ে ওঠেনি তো? আইনের শাসন সবারই কাম্য। সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে যেন শাসনের আইন কায়েম হয়ে না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.