পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহর বদলে যারা শয়তানকে অভিভাবক বানায় তারা হতভাগা

১১৯. ওয়া লা উদ্বিল্লান্নাহুম ওয়া লা উমানি্নইয়ান্নাহুম ওয়া লা আ-মুরান্নাহুম ফালা ইউবাত্তিকুন্না আ-যা-নাল আনআ'-মি ওয়া লা আ-মুরান্নাহুম ফালা ইউগায়্যিরুন্না খাল্ক্বাল্লাহি; ওয়া মান ইয়্যাত্তাখিযিশ্ শাইত্বানা ওয়ালিয়্যাম্ মিন দূনিল্লাহি ফাক্বাদ খাছিরা খুছরানাম্ মুবীনা।


১২০. ইয়ায়ি'দুহুম ওয়া ইউমান্নীহিম; ওয়া মা ইয়ায়ি'দুহুমুশ্ শাইত্বানু ইল্লা গুরূরা।
১২১. উলা-য়িকা মা'ওয়া-হুম্ জাহান্নামু; ওয়ালা ইয়াজিদূনা আ'নহা মাহীসা।
১২২. ওয়াল্লাযীনা আমানূ ওয়া আ'মিলুস্ সালিহাতি ছানুদ্খিলুহুম জান্নাতিন তাজরী মিন তাহ্তিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা আবাদান; ওয়া'দাল্লাহি হাক্বা; ওয়া মান্ আসদাক্বু মিনাল্লাহি ক্বীলা। [সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১১৯-১২২]

অনুবাদ
১১৯. শয়তান আরো বলেছিল, আমি অবশ্যই তাদের বিপথগামী করব, আমি তাদের মনে নানা রকম অসৎ কামনা-বাসনা জাগিয়ে তুলব এবং আমি তাদের কুসংস্কারের দিকে প্ররোচিত করব_যেমন তারা যেন গৃহপালিত জন্তু-জানোয়ারের কান ছিদ্র করে দেয়। আমি তাদের আরো প্ররোচিত করব, যেন তারা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে বিকৃত করে দেয়। যে ব্যক্তি এভাবে আল্লাহর বদলে শয়তানকে নিজের অভিভাবক বানিয়ে নেবে, সে অবশ্যই এমন ক্ষতির সম্মুখীন হবে যা সুস্পষ্ট দুর্ভাগ্যজনক।
১২০. সেই শয়তান তাদের মনের ভেতর নানা আশ্বাস দেয় এবং অসৎ বাসনা সৃষ্টি করে। আর শয়তান যা আশ্বাস দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
১২১. এরাই হচ্ছে সেই সব ব্যক্তি, যাদের আবাসস্থল জাহান্নাম_যা থেকে মুক্তির কোনো পথই তারা খুঁজে পাবে না।
১২২. অপরদিকে যারা (শয়তানের প্ররোচনা উপেক্ষা করে) ইমান আনবে এবং সৎ কাজ করবে, তাদের আমি অচিরেই এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার পাদদেশ দিয়ে নদী বয়ে গেছে, তারা সেখানে অনন্তকাল ধরে থাকবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, আর তার চেয়ে বেশি সত্য কথা কে বলতে পারে।

ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোতে শয়তানের স্বরূপ ও তার কুমন্ত্রণা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এখানে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে মানুষ সৃষ্টির প্রাক্কালে অভিশপ্ত শয়তান মানুষের পেছনে লাগার যে দুষ্ট-প্রতিজ্ঞা করেছিল সে কথা। সে প্রথমেই প্রতিজ্ঞা করেছিল, আমি কিছু মানুষকে হলেও বিপথগামী করবই। সে মানুষকে কিভাবে বিপথগামী করবে, তার কিছু কলাকৌশল খুলেও বলেছিল। সে বলেছিল, আমি মানুষের মনে নানা রকম অসৎ কামনা-বাসনা জাগিয়ে তুলব এবং আমি তাদের কুসংস্কারের দিকে প্ররোচিত করব। এখানে কিছু কুসংস্কারের কথা উল্লেখও করা হয়েছে_যেমন গৃহপালিত জীবজন্তুর কান কেটে বা ছিদ্র করে কোনো চিহ্ন লাগিয়ে দেব-দেবীর নামে ছেড়ে দেওয়া বা এদের শরীরে উল্কি এঁকে দেব-দেবীর নামে চিহ্নিত করা ইত্যাদি।
এই আয়াতগুলোর বর্ণনা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, শয়তান প্রকৃতপক্ষে অশরীরি সত্তা। সে মানুষের মনের ভেতরে অসৎ কামনা-বাসনা জাগিয়ে তুলতে পারে এবং মানুষকে কুকর্ম ও কুসংস্কারের দিকে প্ররোচিত করতে পারে। শয়তান মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতিকে বিকৃত করতে প্ররোচিত করতে পারে। আল্লাহর সৃষ্টি ও প্রকৃতিকে বিকৃত করার মানে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, মানুষকে তার স্বাভাবিক মানবিক গুণাবলি থেকে বিচ্ছিন্ন করা। এর অন্যতম অবলম্বন হলো মানুষকে কুসংস্কারে জড়িত করা। কুসংস্কার মানুষকে এবং মানব সমাজকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায়। মানবজাতির এ রকম অনিষ্টকারী যে শয়তান, তাকে যে মানুষ তাদের অভিভাবক বানায়, অর্থাৎ তার প্ররোচনা অনুযায়ী চলে, তাদের চেয়ে হতভাগা এ জগতে আর কেউ নেই। শয়তানের ক্রীড়নক হয়ে যায় যে মানুষ, সে দুনিয়া ও আখেরাতে হতভাগ্য। কারণ শয়তান যে আশ্বাসের ভিত্তিতে প্ররোচনা দেয়, তা প্রতারণা মাত্র। তাদের পরিণতি জাহান্নাম, সেখান থেকে তারা মুক্তি পাবে না। অপরদিকে শয়তানের প্ররোচনা উপেক্ষা করে যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে আসবে এবং সৎ কাজ করবে, তারা হবে সৌভাগ্যবান। তাদের জন্য ইহ ও পরকালে রয়েছে সম্মান ও শান্তিময় জান্নাত।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.