মাশরাফিকে নিয়ে হঠাৎ কেন এই নাটক, ষড়যন্ত্রের গন্ধ! by আরিফুর রহমান বাবু

হঠাৎ কি হলো মাশরাফির? প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় খেলার আগে হুট করে তাঁকে বিশ্রাম দেয়া কেন? তবে কি মাশরাফি শতভাগ ফিট ছিলেন না? আর যদি তা নাই থাকবেন, তাহলে তাকে নেয়াই বা হলো কেন? নির্বাচক তথা টিম ম্যানেজমেন্ট কি আগে খুঁটিয়ে দেখেনি? ফিটনেস ও পারফরম্যান্সে প্রত্যাশিত মানে আছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য মাশরাফি তো ফতুলস্নায় ইংলিশদের বিরম্নদ্ধে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন।
নির্বাচকরাও সে ম্যাচ দেখেছেন। তবে কি তাঁরা ভুল দেখেছেন? মাশরাফি তাহলে তখন শারীরিকভাবে ফিট ছিলেন না। আর যদি ফিট থেকেই থাকেন, তাহলে রাতারাতি এমন কি হলো, যে কারণে তাঁকে বিশ্রামে পাঠানো? গত রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে মাশরাফিকে আর যাই হোক আনফিট মনে হয়নি। বল করতে গিয়ে থেমে যাননি। ব্যথায় কুঁকরেও ওঠেননি। বোলিং রান আপ কমিয়ে স্পিনারদের মতো বলও করেননি। উইকেট না পেলেও মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই বল করেছেন। তাও খুব কচ্ছপ গতিতে নয়, ১২৮ কিলোমিটারে। ফিটনেস সমস্যা না থাকলে তাঁকে আবার বিশ্রাম দেয়া কেন? মাশরাফি কিছুটা কূটনৈতিক ভাষায় পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পাশ কাটানোর মতো একটা ইসু্যও হাতে আছে। তাঁর মা অসুস্থ। তাঁর সেবা শুশ্রূষার জন্য পাশে থাকা প্রয়োজন_এই ধোয়া তুলে বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় মাশরাফি। সেটা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার ইচ্ছেয় নয়, টিম ম্যানেজমেন্ট তথা বোর্ডের সঙ্গে কোনরকম মন কষাকষি বা নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়াতে। মাশরাফির ভালই জানা, তাঁকে আসলে বিশ্রাম নয়, বাদ দেয়া হয়েছে। আর সে কারণেই বিশ্রামে পাঠানোর কথা শুনে চট জলদি টিম হোটেল ছেড়ে নিজ বাসায় গিয়ে ওঠার সিদ্ধানত্মও নিয়ে ফেলা। কিন্তু কেন বাদ দেয়া হয়েছে, তার উত্তর নেই। প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম হয়ত অবস্থানগত কারণেই 'ড্রপ' না বলে জানিয়েছেন ম্যাশকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। আট মাস পর দলে ফিরে মাশরাফি পারফরম করতে পারেননি। বল হাতে উইকেট পাননি। আর ব্যাট হাতেও ফিরে গেছেন ৪ রানে। হাঁটুর অপারেশনের মতো জটিল ও কঠিন অপারেশনের ধকল সামলে মাঠে নেমে অমন পারফরম্যান্স কি আর খুব বেশি খারাপ? ওই ম্যাচে তামিম ছাড়া আর কেই-বা ভাল খেলেছে? বাংলাদেশ যে ২২৮ রান করেছে, তামিম একাই তার বেশির করেছেন। আর বোলাররা যে চার উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন, তার তিনটি জমা পড়েছে নাইমের পকেটে। বাকিরা তো ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন। আরেক পেসার সফিউল তো মাত্র ২ ওভার বল করেছেন। তাহলে মাশরাফির কি এমন দোষ? বেশির ভাগ পারফরমার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে একা মাশরাফি ব্যর্থ বলার সুযোগ নেই। নির্বাচকরা দায় এড়াতে পারবেন না। সেটা অক্টোপাসের মতো তাদের চেপে ধরবেই।
এদিকে মাশরাফিকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের এমন আচরণে ক্রিকেট অনুরাগীরা যারপরনাই হতাশ। ুব্ধও। তাদের ভাষায়, এটা রীতিমত খামখেয়ালিপনা। যা মোটেই অনাকাঙ্ৰিত ও অনভিপ্রেত। আর যাই হোক মাশরাফি কোন সাধারণ ক্রিকেটার নন। এদেশের ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা পারফরমার। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সে সাীই দিচ্ছে। তাকে নিয়ে এমন ছেলে খেলার কোনই মানে হয় না। তারা এর ভেতরের খবর খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তা খুঁজতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে এসেছে। ভেতরের খবর, মাশরাফি টিম ম্যানেজমেন্টের রোষানলে। খোদ কোচ জেমি সিডন্স তাঁর বিষয়ে খুব একটা উৎসাহী নন। জেমির পরো প্রভাবেই মাশরাফির এ অবস্থা। মাশরাফি ইনজুরির কারণে গত আট মাস মাঠের বাইরে। তাঁকে ছাড়াও দল মোটামুটি ভালই খেলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরম্নদ্ধে টেস্ট-ওয়ানডে সিরিজে শতভাগ সাফল্য ধরা দিয়েছে। তার পর জিম্বাবুইয়ের বিরম্নদ্ধেও সিরিজ বিজয়ের সাফল্য এসেছে। ওই সাফল্যে মাশরাফি নেই। কোচ হয়ত প্রমাণের চেষ্টা করছেন, মাশরাফি ছাড়াই দল ভাল খেলেছে। সাফল্য পেয়েছে। পাচ্ছেও। তাই বলে কি মাশরাফির প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে? নাজমুল, সৈয়দ রাসেল, রাজিব, রম্নবেল ও সফিউলরা কি মাশরাফির বিকল্প হতে পেরেছে? কাউকে এতটুকু অসম্মান না করেই বলা, ওদের কারও কি সে, মেধা, যোগ্যতা, প্রত্যয় আর দৃঢ় সংকল্প আছে? থাকলে এর মধ্যে আরেক নতুন মাশরাফির উন্মেষ ঘটত। তা কি ঘটেছে? ঘটেনি। কেউ নিজের অপরিহার্যতাই প্রমাণ করত পারেনি। তাই আজ রাজিব, কাল নাজমুল, পরশু রাসেল ও তারপর দিন সফিউলকে খেলানো হচ্ছে। তাহলে মাশরাফিকে নিয়ে কেন এই ছেলেখেলা? তবে কি নড়াইল এক্সপ্রেস ষড়যন্ত্রের শিকার? নান্নুর মতো বিশ্বকাপের আগে তাঁকে নিয়েও কোন মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে যেমন গর্ডন গ্রিনিজ এন্ড কোং নান্নুকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ স্কোয়াড সাজিয়েছিলেন। এবার জেমি কি গ্রিনিজের মতো নিজ মাটিতে বিশ্বকাপে ম্যাশকে বাইরে রেখেই দল সাজানোর চিনত্মা করছেন?

No comments

Powered by Blogger.