শিশুকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ- উদ্বেলিত প্রজন্ম চত্বর

 ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে প্রজন্ম চত্বরে হাজির হলেন তিনি। তখন বেলা ১টা। পাঞ্জাবির ওপরে মুজিব কোট। বাবার কোলে ওঠে আসেন নতুন প্রজন্মের যেন এক বঙ্গবন্ধু।
এসেই খুব বেশি অপেক্ষা করেননি তিনি। শুরু হলো বক্তব্য। মাইকে কচি কণ্ঠে উচ্চারিত হলো, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম...।’ সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হলো চলমান এই সংগ্রামে শামিল হওয়ার। পাল্টে গেল পুরো সমাবেশের চিত্র। তখন হাজার হাজার প্রতিবাদী জনতার চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে ৫ বছরের শিশু অপূর্বকে। দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন শিশু বঙ্গবন্ধু।
একদিকে চলছিল ভাষণ, অন্যদিকে মুহুমুহু করতালি দিয়ে ভাষণের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছিলেন উপস্থিত জনতা। বেলা ১টা থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত টানা ১৫ মিনিট ৭ মার্চের ভাষণ হুবহু বলেন অপূর্ব। ১৯৭১ সালের রেসকোর্স ময়দানের মতোই শাহবাগের জনতা ফেটে পড়ে স্বাধীনতার উদ্দীপনায়। শিশুটির কণ্ঠে যখন ভেসে আসে, ‘তিনি আমার কথা শুনলেন না, শুনলেন ভুট্টো সাহেবের কথা...।’ তখন ইয়াহিয়ার মতোই রাজাকারদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ছিটকে পড়ে অপূর্বের কণ্ঠে।
শিশুর কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর মতোই উচ্চরিত হলোÑ ‘আপনারা নির্ধারিত সময়ে বেতন নিয়ে আসবেন। যদি একটিও গুলি চলে তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলবেন। যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা তাদের ভাতে মারব পানিতে মারব। হুকুম দিবার জন্য আমি যদি না থাকি, আমার সহকর্মীরা যদি না থাকেন, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ কিছু বলবে না। গুলি চালালে আর ভাল হবে না। সাত কোটি মানুষকে আর দাবিয়ে রাখতে পারবা না। বাঙালী মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না।’
ভাষণের পর বাবার কোলে দীর্ঘ সময় বসে ছিল অপূর্ব। বিদ্রোহের চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছে শিশুটি নিজেও।

No comments

Powered by Blogger.