স্কুল ছাত্রদের কৌশলে ক্যাডার বানাচ্ছে শিবির- কিশোর বয়সেই মনে গেঁথে দিচ্ছে জিহাদের মন্ত্র by রিয়াদুল করিম

 স্কুলগামী শিশু কিশোরদের কোমল মনে 'জিহাদে'র বীজ বপন করে চলেছে মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা উৎখাত করে তারা 'আলস্নাহর আইন' কায়েম করতে চায়।
এজন্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর মতোই টার্গেট করে কিশোরদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে তাদের 'আলস্নাহর রাসত্মায় জান মাল কুরবানী' করার দীৰা দেয় সংগঠনটি। ইহকাল পরকালে পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে কিশোরদের মগজ ধোলাই করে জিহাদী জোস বাড়িয়ে একেকজন মেধাবী ছাত্রকে বর্বর খুনী হিসাবে গড়ে তুলছে সংগঠনটি। যারা জিহাদী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয় বেশিমাত্রায় তারাই হয় শিবিরের ক্যাডার উইংয়ের সদস্য। তাদের দেয়া হয় বিশেষ প্রশিৰণ। তখন আর রগ কাটতেও তাদের হাত কাঁপে না। এসব কিশোর সংগঠনটির সদস্য হতে গেলে 'সংগঠনের স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থ অকুণ্ঠচিত্তে কুরবানী করা'র শপথ দেয়া হয়।
সংগঠনটির ল্য ও উদ্দেশ্যেই বলা হয়, 'ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্র সমাজকে আলস্নাহর রাহে নিজেদের বিলিয়ে দেবার জন্যে উদাত্ত আহ্বান জানায়। জান্নাতের পথে ডাক দিয়ে যায় বার বার।' সংগঠনটির পাঁচ দফা কর্মসূচীর তৃতীয়টি হচ্ছে প্রশিণ। এখানে বলা আছে, তাদেরকে দুনিয়ার সবকিছু আলস্নাহর রাসত্মায় কুরবানী করায় অভ্যসত্ম হতে হবে।
আলস্নাহর রাসত্মায় জান মাল দিয়ে জিহাদকারীদের সংখ্যা বাড়াতে ইসলামী ছাত্রশিবির এগিয়ে চলেছে খুব কৌশলে। মানুষের কিশোর অবস্থাকে তারা বেছে নেয় কর্মী বানানোর উপযুক্ত সময় হিসাবে। এ সময় শিৰার্থীদের মন থাকে কোমল। যেকোন কিছু খুব সহজে তাদের মনে গেঁথে দেয়া যায়। এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে শিবির। তারা টার্গেট করে স্কুলের ছাত্রদের। বিভিন্ন ইসলামী বই পড়ানোর মাধ্যমে তাদের ভেতর কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে 'জিহাদে'র মন্ত্র। নিবিড় পর্যবেৰণের মাধ্যমে টার্গেটকৃতদের মনে গোঁড়ামি পাকাপোক্ত করে দিচ্ছে মৌলবাদী এ সংগঠনটি। সংগঠনটির ৫ দফা কর্মসূচীর প্রথমটি হচ্ছে দাওয়াত। এখানে বলা হয়, 'অনেকগুলো ছাত্রকে এক সঙ্গে টার্গেটের আওতায় না এনে সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী কমসংখ্যক ছাত্রের উপর অত্যনত্ম ধৈর্য ও আনত্মরিকতার সঙ্গে নিয়মিত কাজ চালিয়ে যেতে হবে।' আর ঠিক সেভাবেই কাজ করে চলেছে সংগঠনটির কর্মীরা।
তাদের কর্মসূচী অনুযায়ী প্রথমেই তারা স্কুলের নির্দিষ্ট ছাত্রদের টার্গেট করে। গড়ে তোলে সুসম্পর্ক। সংগঠনের কর্মী করে নেয়। তখন তাদের পড়তে দেয়া হয় নানা ইসলামী বই। এসব বইয়ের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দেয় জিহাদের মন্ত্র। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরম্নদ্ধে ফুঁসিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
শিবিরের সাংগঠনিক সিলেবাস অনুযায়ী স্কুলছাত্রদের পড়তে দেয়া হয় শিবিরের নিজস্ব প্রকাশনা এসো আলোর পথে, গোলাম আজমের লেখা কিশোর মনে ভাবনা জাগে, মুক্তির পয়গাম, নতুন পৃথিবীর স্বপ্নসহ বিভিন্ন বই। এসব বইয়ের মাধ্যমে সূক্ষ্মভাবে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয় কিশোরদের। লোভ দেখানো হয় বেহেসত্মের।
'কিশোর মনে ভাবনা জাগে' বইয়ের ৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় জিহাদের প্রতি কিশোরদের আকৃষ্ট করতে বলা আছে, 'জিহাদ হলো মুসলিম জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আমরা যদি এ দায়িত্ব পালন করতে চেষ্টা করি তাহলে দুনিয়াতেও আমরা সুখ শানত্মি পাব, আর আখেরাতে তো জিহাদের জন্যই সবচেয়ে বড় পুরস্কার দেয়া হবে।'
ধর্মকে পুঁজি করে, বেহেসত্মের লোভ দেখিয়ে কিশোরদের শিবির দলে টানছে। কিশোর মনে ভাবনা জাগে বইটিতেই আছে সে বেহেসত্মের হাতছানি। আর সে বেহেসত্ম পেতে হলে যোগ দিতে হবে শিবিরে! করতে হবে জিহাদ! এমন ইঙ্গিত দিয়েই বইটির ৪৪ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 'আমরা যদি দুনিয়াতে মুসলিম হিসাবে চলতে চাই এবং আখেরাতে বেহেসত্ম পেতে চাই তাহলে আমাদের ইকামতে দ্বীনের আন্দোলনে শরীক হতে হবে এবং এর জন্য ইসলামী সংগঠনে যোগদান করতে হবে।'
'এসো আলোর পথে' বইয়ে আলস্নাহর রাসত্মায় জান মাল দিয়ে জিহাদ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয় কুরআনের বেশ কিছু আয়াতের ব্যাখ্যা করে। একই বইয়ের ১০ম পৃষ্ঠায় বলা হয়, কুরআনের আলোকে উম্মাতে মুসলিমার দায়িত্ব হলো নিজেদের সব যোগ্যতা ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আলস্নাহর পথে জিহাদ বা ইসলামী আন্দোলন।
আর এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য বণনা করা হয় আরেকটু পরে। ১৫ পৃষ্ঠায় বলা আছে, 'খতম করতে হবে শত বছরের খোদাদ্রোহী শক্তির জুলুমশাহীকে।'
ইবনে মাসুম লিখিত 'মুক্তির পয়গাম' বইয়ে দেয়া হয় তাদের জিহাদের ব্যাখ্যা। বইটিতে বলা হয় 'ইবাদতের আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষের ওপর থেকে আলস্নাহ ছাড়া অন্য শক্তির প্রভুত্বকে খতম করা। আর এই উদ্দেশ্যে জান মাল ব্যয় করে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করার নাম জিহাদ।' এখানে আরও বলা হয়, 'আজকের সমাজের নেতৃত্ব কর্তৃত্ব রয়েছে অত্যাচারী দূরাচারী লোকদের হাতে। ইসলাম চায় দুনিয়ার সব জায়গা থেকে এই অসৎ নেতৃত্বকে খতম করে আলস্নাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে। আর এ প্রচেষ্টার নামই জিহাদ।'
এ জিহাদের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় কিশোরদের কাঁধে। বর্তমান শাসন ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই বইয়ের 'কিশোরের দায়িত'্ব শীর্ষক অধ্যায়ে বলা আছে, 'এসো গড়ে তুলি সত্যের ঝা-াবাহী একদল সৈনিক। যারা মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্বকে খতম করে দিয়ে গড়ে তুলবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এক সুন্দর সমাজ।'
আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাও তারা স্বীকার করতে চায় না। কর্মীদের স্বীকার করাতে চায় না। তারা চায় রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরম্নদ্ধে কিশোরদের ফুঁসিয়ে তুলতে। গোলাম আজমের আরেকটি বই মজবুত ঈমান এ বলা হয়েছে, 'আমাদের দেশে মানুষের মন গড়া আইন চালু আছে। আলস্নাহর আইন কায়েমের চেষ্টা না করলে বুঝা গেল যে মানুষের তৈরি চালু আইনকে মন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এসব আইন বৈধ মনে করা যে শিরক তা অনেকেই বুঝে না। যারা এসব অবৈধ আইন উৎখাত করে আলস্নাহর আইন চালু করার চেষ্টা করে তারা শিরক থেকে বেঁচে গেল।'
শিবিরের পাঠ্য আবু আলা মওদুদীর ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ বইয়ে বেশ কিছু আয়াত তুলে ধরে ব্যাখ্যায় বলা হয়, 'প্রভুত্ব মতা কেবল আলস্নাহর জন্যই নির্দিষ্ট অন্য কারও এ অধিকার নেই। আইন রচয়িতা একমাত্র আলস্নাহ। আদেশ এবং নিষেধ করার অধিকার কোন মানুষের নেই।' এই বইয়ে আমাদের দেশে চলমান গণতন্ত্রকেও অস্বীকার করা হয়।
কর্মী থেকে দ্বিতীয় ধাপ সাথী সর্বশেষ ধাপ শিবিরের সদস্য হতে একজন কর্মীকে পড়তে হয় এ ধরনের অনেক বই। আসত্মে আসত্মে তাদের মগজে গেঁথে যায় জিহাদ। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, যাদের ওপর এটি বেশি প্রভাব বিসত্মার করে তাদের যোগ করা হয় সংগঠনটির ক্যাডার উইংয়ে। আর এ ক্যাডাররাই মধ্যযুগীয় বর্বরতা, নৃশংসতায় খুন করে ফারম্নকদের।
সংগঠনটির সদস্য হতে হলে তাদের আর নিজের বলে কিছু থাকা যাবে না। সংগঠনের স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থ অকুণ্ঠচিত্তে কুরবানী করার শপথ নিতে হয়। তাদের কর্মপদ্ধতি অনুযায়ীই সংগঠনটির সর্বশেষ ধাপ সদস্যদেরকে 'সংগঠনের স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থ অকুণ্ঠচিত্তে কুরবানী করতে হয়। সংগঠনের নির্দেশ যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে আনত্মরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয় ত্যাগ তিতীায় অগ্রগামী থেকে উজ্জ্বল দৃষ্টানত্ম স্থাপন করতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.