ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) ও মহানবী (সা.)-এর পরিপূর্ণ আদর্শ অধ্যাপক by ড. মুহাম্মদ রইসুদ্দীন

রবিউল আউয়াল এমন এক পবিত্র মাস যে মাসে মহান আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত, নবুওয়ত ও রিসালতের উজ্জ্বল নৰত্র রাসূলে করীম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম এ ধরার বুকে পাঠিয়ে স্বীয় নূর দ্বারা সমগ্র জগতকে আলোকিত করে দেন।
১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহি সাদিকের সুপ্রভাতে হযরত মুহাম্মদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম পৃথিবীতে আগমন করেন। জগতের প্রতিটি প্রানত্ম মহানবী (সা.)-এর নূরের আভায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শানত্মি ও কল্যাণের সমসত্ম রম্নদ্ধদ্বার খুলে যায়। পরশ পাথরের স্পর্শের মতো মহানবী (সা.)-এর ছোঁয়ায় এসে একালের বর্বর লোকেরা পেল আলোর দিশা, পরিপূর্ণ হলো খাঁটি মানুষে। তাই যুগে যুগে, কালে-কালে মানুষ এ নূরানী দিবসকে স্মরণ করে আনন্দ উৎফুলস্নতায় পালন করে আসছে। আলস্নাহ পাকের এ মহান নিয়ামত প্রাপ্তির দিনকে স্মরণ করে আবার সেসব প্রেরণায় উদ্বেলিত হয়, আত্মায় এক বেহেশতী প্রশানত্মি লাভ করে। এ প্রশানত্মি তার হৃদয়ের কালিমা দূরীভূত করে তাকে নতুনভাবে সংগঠিত হতে এবং নতুন সাজে সজ্জিত হতে প্রেরণা যোগায়। আর মানুষের ফিতরাত বা স্বভাব হচ্ছে সুন্দর আনন্দময়, কল্যাণকর কোন বস্তু, ব্যক্তি ও কোন ঘটনায় আনন্দিত হওয়া। তাকে যে কেউ কোন প্রকারের অনুগ্রহ ও বদান্যতা দেখালে বা করলে সে যদি কৃতজ্ঞ লোক হয়, তবে যুগে যুগে তা স্মরণ করে তার প্রশংসা করে। নিঃসন্দেহে মানব জাতির ওপর আলস্নাহ তায়ালার সমসত্ম নিয়ামত বা অনুগ্রহের মধ্যে মহান নিয়ামত হলো তাঁর প্রিয় হাবীবকে (সা.) আমাদের মাঝে পাঠানো। তাই আলস্নাহ পাক মানুষের প্রতি যে অসংখ্য অগণিত অনুগ্রহ করেছেন তার কোনটার কথাই উলেস্নখ করেননি, মাত্র একটি অনুগ্রহের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করেছেন এবং বড় ইহ্সান করেছেন বলে উলেস্নখ করেছেন। তা হলো তাঁর প্রিয় হাবীবকে (সা.) এ ধরার বুকে প্রেরণ করানো (সূরা আলে ইমরান-১৬৪)। সুতরাং বুঝা গেল যে, মানুষের প্রতি আলস্নাহ তা'আলার এ মহান অনুগ্রহের ওপর খুশি হওয়া এবং এ অনুগ্রহের শুভ মুহূর্তকে স্মরণ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। যারা করে না তারা মানুষ বলে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার গৌরব করতে পারে না। মানুষ আলস্নাহ পাকের নিয়ামত প্রাপ্তির দিনকে স্মরণ করে আসছে যুগে যুগে এবং কালে কালে।

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) কী?
প্রথমে আমাদের জানতে হবে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম কি ও কাকে বলে। আমরা জানি 'ঈদ' শব্দের বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি হলো 'কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়ার দিন বা স্মৃতিচারণের দিবসই ঈদ। (আল মুনজিদ) আর 'মিলাদ' অর্থ জন্মকাল, জন্মদিন বা জন্মস্থান (লেসানুল আরব)।
সুতরাং 'ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী' সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলতে বুঝায় "পৃথিবীর বুকে মহানবীর (সা.)-শুভাগমন তথা তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ ভক্তি, মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য লাভের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরূদ সালাম পাঠ করা। তাঁর জীবনাদর্শ আলোচনা করা ও তাঁর আদর্শ স্মরণে খুশি হয়ে সেই আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে যে মহতী অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয় তাকেই 'ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.)' বলা হয়।
সুতরাং এ সংজ্ঞার আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলৰে যা করা হয় তন্মধ্যে কোনটাই শরিয়তের বিপরীত নয়। তবে আজকের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করার রীতি প্রথম তিন যুগে ছিল না। তবে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলৰে আজকে যা কিছু করা হয়, তার ভিত্তিগত প্রমাণ তাতে পাওয়া যায়। যুগ ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটাও একটি নিয়ম ও শৃঙ্খলায় চলে আসে। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ সোলায়মান নদভী লিখেছেন : মিলাদ অনুষ্ঠানের প্রচলন সম্ভবত চতুর্থ শতাব্দী থেকে আরম্ভ হয়। আর আলস্নামা সাখাবী বলেছেন : তৃতীয় শতাব্দী পর্যনত্ম ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.)-এর ধারাবাহিক নিয়ম ছিল না। এরপর প্রচলন হয়ে আজ পর্যনত্ম চালু আছে। এটার পর নিয়মিত সমসত্ম দেশে ও শহরে মুসলমানরা ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করে আসছেন। আর রাসূলে করীম (সা.)-এর জন্মকাহিনী ও এতদসম্পর্কে ঘটনাবলী আলোচনা করে থাকেন। যার শুভ ফল তাদের ওপর প্রকাশ পায়।

মহানবীর (সা.) পরিপূর্ণ আদর্শ
আদর্শ যতই মনোরম ও মোহনীয় হোক না কেন, যতৰণ পর্যন্ত কোন মহাপুরম্নষের জীবনের সব কিছু আমাদের সম্মুখে পরিস্ফুট না হয়_ কিছুটা ব্যক্ত, কিছুটা অব্যক্ত, কিছুটা অলৌকিক ঘটনা দ্বারা আচ্ছন্ন ও কিছুটা স্পষ্ট দিবালোকের মতো প্রতিভাত_ ততৰণ পর্যনত্ম সেই চরিত্র কখনও মানব জাতির আদর্শরূপে বরণীয় হতে পারে না।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ব্যতীত হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.) বুদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ কত মহাপুরম্নষই জগতে আবিভর্ূত হয়েছেন, কিন্তু তাঁদের জীবনের বহু ঘটনা মানুষের কাছে অজ্ঞাত ও অস্পষ্ট রয়েছে। এতদিন মানুষ কোন মহাপুরম্নষকে মানুষ বলে চিনত্মা করত। আপনজন বলে দাবি করতে পারে নাই। তার প্রাণের নিভৃত পুরে এই মহৎ হৃদয়ের কোন স্পন্দন জাগে নাই। কিন্তু যেদিন মহানবী (সা.) উদাত্তকণ্ঠে পবিত্র কুরআনের ভাষায় ঘোষণা করলেন : "আনা বাশারম্নম মিছলুকুম" অর্থাৎ "আমি তোমাদের মতোই মানুষ"_ (আল কুরআন) ১৮ঃ১১০। তোমাদের মতো আমার সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা রয়েছে। আমার ধমনীতে তোমাদেরই মতো রক্ত প্রবাহিত হয়। আমি তোমাদের মতো জন্ম-মৃতু্যর অধীন_ সেইদিন মানুষ তার হৃৎ-সম্বিত ফিরে পেয়েছে। তার সুপ্ত শক্তি জেগে উঠেছে এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে গেছে।
মহানবী (সা.)-এর আদেশ ছিল "ঘরে বাইরে, মসজিদে ও যুদ্ধৰেত্রে শয়নে ও জাগরণে সকল অবস্থায় আমার যা কিছু দেখ, সব মুক্তকণ্ঠে প্রকাশ করে দাও।" তাইতো তাঁর প্রিয় সহচরগণ তাঁর জীবনের সব বিষয় অত্যনত্ম নিষ্ঠার সঙ্গে জগতের সামনে রেখেছেন। তাঁর পুণ্যবতী সহধর্মিণীগণও তাঁর নিভৃত জীবনের সবকিছুই অকুণ্ঠচিত্তে বর্ণনা করেছেন। মহানবী (সা.) নির্মিত মসজিদের সংশিস্নষ্ট একটি চত্বরে হযরত আবু হোরায়রা (রা.) ও অন্যান্য তাপসবৃন্দ বাস করতেন_ যাঁরা সত্য সাধনায় নিজেদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা বছরের পর বছর ধরে মহানবী (সা.)-এর অমীয় বাণী একাগ্রতার সঙ্গে শুনেছেন এবং অসাধারণ নিষ্ঠার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন।
রাসূলে করীম (সা.)-এর নবুওয়তের পূর্বে তাঁর দীর্ঘ চলিস্নশ বছরের জীবন বিশেষভাবে পরীৰা করার সুযোগ তাঁর পরম শত্রম্নগণও পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে হযরত মুহাম্মদ (সা.) শত্রম্ন-মিত্র নির্বিশেষে অনেকের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করেছেন। এৰেত্রে পদে পদে পদস্খলনের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তিনি এমন এক সততা ও নির্মল চিত্ততার পরিচয় দিয়েছেন যে, দেশবাসী সকলেই অকুণ্ঠচিত্তে তাঁকে আল-আমীন (বিশ্বসত্ম) উপাধি দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন মহাপুরম্নষ তাঁর জাতির নিকট হতে এ সম্মান লাভ করে নাই। প্রতিজ্ঞা পালন ও আমানত রৰার প্রতি এ মহাপুরম্নষের এমন এক অসাধারণ নিষ্ঠা ছিল যে হিজরতের সঙ্কটময় মুহূর্তেও তাঁর নিকট শত্রম্নদের গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দেবার জন্য হযরত আলীকে (রা.) নির্দেশ দিয়ে তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের সমসত্ম ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হলেও তা আদৌ গোপন করা হয় নাই। সামান্যতম অবহেলার জন্যও তিনি নিজেকে কোন দিন ৰমা করেন নাই এবং কুরআনের আয়াতে ঐ সম্বন্ধে তাঁর প্রতি সতর্কবাণীও উচ্চারিত হয়েছে। একবার হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার একজন কুরাইশ প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় মগ্ন ছিলেন, এমন সময় একজন সত্যান্বেষী অন্ধ এসে উপস্থিত হলো, কিন্তু তিনি সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে ঐ কুরাইশ প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় মগ্ন ছিলেন। এই সামান্যতম অবহেলার জন্য আলস্নাহ পাক অসনত্মোষ প্রকাশ করে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন এবং পবিত্র কুরআনে যুগ যুগ ধরে তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইচ্ছা করলে মহানবী (সা.) কুরআনের এ আয়াতটি অতি সহজে উলেস্নখই না করতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা গোপন না করে বিশ্ব মানবের জন্য তাঁর অসাধারণ সত্যনিষ্ঠার জ্বলনত্ম নিদর্শন রেখে গেছেন। এই দীর্ঘ ১৪শ' বছর ধরে এই আয়াতই আজও পবিত্র কুরআনে তাঁরই সাৰ্য বহন করছে। তাঁর সত্যের প্রতি এই অকৃত্রিম অনুরাগের জন্য উঁচু-নিচু, ছোট-বড় সকল শ্রেণীর মানুষ ধীরে ধীরে ভক্তি শ্রদ্ধায় তাঁর প্রতি অনুরক্ত না হয়ে পারে নাই। এড়ফভৎু ঐরমমরহং তার অঢ়ড়ষড়মু ভড়ৎ ঃযব ষরভব ড়ভ গড়যধসসবফ নামক গ্রন্থে মনত্মব্য করেছেন, "খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের স্মরণ রাখা উচিত যে মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী তাঁর অনুগামীগণের মধ্যে যে উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল, যিশুর প্রাথমিক যুগের শিষ্যবৃন্দের মধ্যে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। যিশু খ্রিস্টকে যখন ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাঁর শিষ্যগণ পালিয়ে যায়। তাদের ধর্মানুরাগ মুছে যায় এবং তারা নিজের গুরম্নকে মৃতু্যর কবলে ছেড়ে দূরে পালিয়ে যায়। কিন্তু ঠিক এর বিপরীত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিষ্যগণ। তাঁদের নির্যাতিত পয়গম্বরের আশপাশে এসে সংঘবদ্ধ হয় এবং নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও মহানবীকে (সা.) শত্রম্নর ওপর জয়যুক্ত করে।"
এ সমসত্ম ভক্তবৃন্দের দৃষ্টানত্মের অভাব নেই। একজন মহাপুরম্নষের মহৎ জীবনের প্রকৃত গুণাবলীর সঙ্গে সম্যক পরিচিত না হলে মানুষের এই অনুরাগ, এই ভক্তি শ্রদ্ধা কেমন করে আসতে পারে যার জন্য মানুষ নিজের জীবন পর্যনত্ম বিসর্জন দিতে পারে। পবিত্র কুরআনের ভাষায় আহ্বান জানানো হয়েছে : "কুল ইন কুনতুম তুহিব্বুনালস্নাহ ফাত্্তাবিউনী ইউহ্বিব কুমুলস্নাহ" অর্থাৎ : যদি তোমাদের আলস্নাহর প্রতি ভালবাসা ও অনুরাগ থাকে, তবে আমার অনুসরণ কর_ তাহলে আলস্নাহ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন (আল কুরআন ৩ঃ৩১)।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুগামী শিষ্যবৃন্দ মহানবী (সা.)-এর প্রতি একানত্ম আনুগত্য ও অকৃত্রিম ভক্তি শ্রদ্ধার দ্বারা কুরআনের এ আয়াতটি বর্ণে বর্ণে তাঁদের জীবনে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং আলস্নাহর করম্নণাও বর্ষার বারিধারার ন্যায় তাঁদের ওপর নেমে এসেছে।
মহানবী (সা.) ছিলেন গোটা মানব জাতির জন্য নবী ও সমগ্র জাতির জন্য রহমতস্বরূপ। যেমন পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : "কুল ইয়া আইউহান্নাসু ইন্নী রাসূলুলস্নাহে ইলাইকুম জামিআ" অর্থাৎ_ বল হে মানব...আমি তোমাদের সকলের জন্যই প্রেরিত রাসূল (আল-কুরআন-৭ঃ১৫৮)। 'ওমা আরসালনাকা ইলস্না রাহ্্মাতালিস্নল আলামীন' অর্থাৎ তোমাকে সমগ্র বিশ্বের রহমত ব্যতীত আর কিছুর জন্য পাঠাই নাই।
উপসংহার : উপসংহারে বলা যায় যে, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের পেছনে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এ হওয়া চাই যে, প্রিয়নবী (সা.)-এর সর্বোত্তম আদর্শের চর্চা করে তা নিজেদের জীবন ও কর্মে অনুসরণ করার মানসিকতা গড়ে তোলা। তাঁর প্রেম দ্বারা নিজের মৃত আত্মাকে সঞ্জীবিত করা।
তাই ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) প্রাণহীন প্রথা নয় বরং এটা প্রাণসঞ্জাত রসম ও রেওয়াজ। এতে নিহিত আছে জীবনের স্পন্দন। দার্শনিক আলস্নামা ইকবাল ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) সম্পর্কে মনত্মব্য করতে গিয়ে বলেছেন : মূলত যেসব দিবস মুসলমানদের জন্য সুনির্দিষ্ট তন্মধ্যে একটি মিলাদুন্নবী (সা.)-এর দিবস। তাই মুসলমানদের জন্য উচিত, তারা রাসূলের জীবনাদর্শকে সর্বদা নিজের চোখের সামনে রাখেন, যাতে আনুগত্য ও কর্মের ভিত অটুট থাকে।
ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গে ড. ইকবাল মাহফিল ও মজলিশের গুরম্নত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন : জলসা শুধুমাত্র খেল তামাশা নয় বরং জাতির ভিত্তি মজবুত করতে এবং জাতির ব্যক্তিত্বকে ঐক্য সূত্রে গ্রথিত করার জন্য হওয়া উচিত। যতৰণ জাতি আপন বুজুর্গদের অবস্থা শুনে নিজে ওইসব সম্মানিত বুজুর্গদের উত্তরসূরি হওয়ার গৌরববোধ হৃদয়ে না জাগবে, ততৰণ তাদের মাঝে উচ্চ আকাঙ্ৰা ও যোগ্যতা সৃষ্টি হতে পারে না।
তাই ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.)-এর মাধ্যমে মুসলমানদের মৃতপ্রায় হৃদয়ে মহানবী (সা.)-এর বহ্নি জ্বালিয়ে দেয়। আর এ নবীপ্রেমের ভেতর দিয়ে মুসলিম ঐক্যের সূত্র খুঁজে পাবে বলে আশা করি। দার্শনিক আলস্নামা ইকবাল যার প্রতি গুরম্নত্বারোপ করেছেন। সুতরাং এ ৰেত্রেও ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.)-এর গুরম্নত্ব অপরিসীম। এ জন্য যুগে যুগে জাতির বিবেকবান আলেমগণ এদিকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে চেষ্টা করে গেছেন। এবং ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের ভেতর মুসলমানদের সমূহ কল্যাণ নিহিত রয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। আজকের এ মুসলিম অনৈক্যের যুগে যার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। অতএব এ আলোচনা দ্বারা সকলের বোধগম্য হবে, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন আজকালকার রসম-রেওয়াজ নয়। বরং এটা হাজার বছর পূর্ব থেকে চলে আসা আমাদের পূর্বসূরি বুজুর্গদের মিরাস সূত্রে পাওয়া এক মহান প্রথা। যার সঙ্গে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িত। যা জাতির নির্জীব প্রাণে ইমান ও ইসলামের স্পন্দন যোগায়। জাতিকে দেয় এক নব প্রেরণা, উদ্যমতা ও সাহস। যার ওপর ভর দিয়ে জাতি নিজের কর্মপন্থা খুঁজে পায় এবং নিজের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় হতে এক মোৰম সুযোগ পেয়ে যায়। আলস্নাহ পাক সকল মুসলমানকে এ বাসত্মবতা বোঝার ও অনুধাবন করে শিৰা নেয়ার তাওফীক দিন। আমীন।

No comments

Powered by Blogger.