কেন এ সব হত্যাকাণ্ড

বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশব্যাপী হত্যা ও সহিংসতা কমে এসেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ দমনে যে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিল তা অনেকেরই প্রশংসা অর্জন করেছিল।
তবে অনাকাক্সিক্ষত কিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বরাবরই একটি অনিশ্চিত অবস্থার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের কিছু হত্যাকাণ্ড প্রাথমিকভাবে একসূত্রে গাঁথা বলে মনে করা হচ্ছে। স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন এসব হত্যাকা-? বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান ও শ্রীনগর উপজেলায় পৃথক দুটি স্থানে তিনটি লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, তিনটি লাশেরই বুকে, গলায় ও মাথায় গুলির চিহ্ন। এদের চোখ ছিল নতুন গামছা দিয়ে বাঁধা। এ ছাড়া দু’হাত পেছনে নিয়ে শক্ত করে বাঁধা ছিল। পুলিশের ধারণা, একই দুর্বৃত্তদের হাতে এই তিনজন খুন হতে পারে। সম্ভবত অন্য কোথাও হত্যার পর এদের দুটি পৃথক জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ ইতোমধ্যে নিহত ৩ ব্যক্তিরই পরিচয় উদ্ধার করেছে। নিহত ব্যক্তিরা ক’দিন আগে থেকেই নিখোঁজ ছিল। বৃহস্পতিবার তাদের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ হত্যাকা-ের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের মোঃ ইব্রাহীম, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পোশাক ব্যবসায়ী কুদ্দুস বেপারি ও রাঢ়ী মাসুদ। এদের মধ্যে মোঃ ইব্রাহীম ঢাকার কদমতলীর স্থানীয় একজন নেতা হত্যার অন্যতম আসামি ছিল বলে জানা গেছে।
যাই হোক, পুলিশের তদন্তে হয়ত হত্যার কারণ বিষয়ে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এ ধরনের হত্যাকা- নিঃসন্দেহে জঘন্য অপরাধ এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন সবার জন্যই নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি সামাজিক পরিবেশ চায় যেখানে হত্যা বা সহিংসতা থাকবে না; প্রতিটি মানুষের জন্য থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
এই তিনটি চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক হত্যাকা-ের কারণে সারা মুন্সীগঞ্জ জেলাতেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন একটি অংশের ব্যর্থতার দায়ভার অবশ্যই সমগ্র বাহিনীর ওপর বর্তায় না। তবে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ব্যাপক তদন্ত অপরিহার্য। এছাড়া এমনও হতে পারে, কোন একটি অপরাধী চক্র এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে চায়। সরকার ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে যাতে জনগণের আস্থা না থাকে সম্ভবত সেই লক্ষ্যে তারা তৎপর।
কারণ নতুন গামছা দিয়ে নিহত ব্যক্তিদের চোখ বাঁধা ও অন্য কিছু লক্ষণ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, নিহত ইব্রাহীম, কুদ্দুস ও মাসুদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসাজশের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ ছাড়া একইভাবে তিনজনকে হত্যার ঘটনাটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ হত্যার পেছনে আরও বড় ধরনের চক্রান্তের নীলনকশা থাকতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবশ্যই তদন্তকালে এসব আশঙ্কার কথা বিবেচনায় আনতে হবে। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণা করেছে। এরপর স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী চক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশে বিদেশী সহযোগীদের সহায়তায় এরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। সুতরাং এমন একটি অবস্থার সঙ্গে এই তিন হত্যাকাণ্ডের যোগ আছে কিনা তারও তদন্ত প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.