অভিনব প্রতারণার ফাঁদ! by শেখ কামাল

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ২০১২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডুয়েল ল্যাপটপ প্রেরণ করা হবে। ডুয়েল ল্যাপটপের বর্তমান বাজারমূল্য ১০,০০০ টাকার অর্ধমূল্য ৫,০০০ টাকা জমা দিয়ে ল্যাপটপ সংগ্রহ করতে হবে এবং প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ডুয়েল ল্যাপটপ সংগ্রহ বাধ্যতামূলক।


এ জন্য উল্লেখিত ব্যাংক হিসাব নম্বরে আগামী ১৬/০২/২০১২ তারিখের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হইল। আদেশক্রমে সিনিয়র সচিব, গোলাম ফারুক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করা এই চিঠি পাঠানো হয়েছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ঠিকানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অল্প দামে ল্যাপটপ কেনার এই চিঠি পেয়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান টাকা পাঠানোর উদ্যোগও নেয়। কিন্তু চিঠিতে উল্লেখ করা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় গেলে জানানো হয়, ব্যাংক হিসাবটি কোনো কর্তৃপক্ষের নয়, একজন নারীর নামে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, চিঠিটি ভুয়া।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম গোলাম ফারুককে চিঠিটি দেখালে তিনি বলেন, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি নয়। প্রতারক চক্র এমনটি করেছে। গোলাম ফারুক নামের কোনো সিনিয়র সচিবও নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া দোয়েল ল্যাপটপ কেনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনাও নেই। এটি একেবারেই প্রতারণা।
ভুলে ভরা বানানে লেখা ওই চিঠিতে দোয়েল বানানটিও ভুলে লেখা হয়েছে ‘ডুয়েল’। এতে ল্যাপটপ সংগ্রহের কিছু নিয়মাবলি দিয়ে বলা হয়, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংক হিসাব নম্বর: ০১৭৬৮০৭১৯৭১৬-তে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (মোবাইল ব্যাংক) শাখা অথবা ব্যাংক মনোনীত এজেন্টের কাছে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক রসিদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। রসিদ সংগ্রহের পর www.doelteletalk.ucoz.com ওয়েবসাইটে ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিশ্চিতকরণ ফরম পূরণ করতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠান পাঁচটি ল্যাপটপের জন্য আবেদন করতে পারবে। একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ল্যাপটপ বাধ্যতামূলক। এ রকম আরও কিছু নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, ব্যাংক রসিদ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে জমা দেওয়া সাপেক্ষে ল্যাপটপ দেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট, ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের চিঠির অনুলিপি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ উত্তম কুমার কর বলেন, ‘চিঠির বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়, চিঠিটি ভুয়া।’
পারভীন সিরাজ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শাখা থেকে জানতে পারি, চিঠিতে দেওয়া হিসাব নম্বরটি একজন নারীর। পরে সন্দেহ হলে এ নিয়ে আর এগোইনি।’
গন্ডা কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে যোগাযোগ করে জানতে পারি, চিঠিটি ভুয়া। খোঁজখবর না নিলে আর্থিক ক্ষতি হতো।’
ব্যাংক হিসাব নম্বরটি সম্পর্কে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কেন্দুয়া শাখার ব্যবস্থাপক জি এম শফিউল আলম খান বলেন, ‘ওই হিসাব নম্বরটি সোনিয়া আক্তার নামের এক নারীর। এতে মাত্র ৯৫ টাকা জমা রয়েছে। সরকারি এ ধরনের চিঠিতে ব্যাংক হিসাব নম্বর থাকে সাধারণত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে, যা এটিতে নেই।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ময়মনসিংহের গৌরীপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. শহীদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সোনিয়া আক্তার নামের ওই ব্যাংক হিসাবটির বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য কেন্দ্রীয় হেল্প লাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে শুধু সংশ্লিষ্ট হিসাবটি ময়মনসিংহ থেকে খোলা হয়েছে বলে জানানো হয়। তা ছাড়া আর কোনো তথ্য জানা যায়নি। তিনি আরও বলেন, কেবল নির্দিষ্ট হিসাবধারী ব্যক্তিকেই হিসাব-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানানো হয়, অন্য কাউকে নয়।
শহীদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই হিসাবটির বিষয়ে আমরা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, ওই হিসাবের অনুকূলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টাকা জমা নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো চুক্তি হয়নি।’

No comments

Powered by Blogger.