উভয়েরই এখন গ্রহণযোগ্য বিকল্প পথ খোঁজা উচিত by গাজীউল হাসান খান

দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকেই মনে করেন, দেশে যদি এ মুহূর্তে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে ক্ষমতাসীন মহাজোটের ভরাডুবি হবে। তা ছাড়া জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা এবং বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতি, এমনকি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে ভবিষ্যতে যখনই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, তখনই


বর্তমান সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠবে। আরেকটি অংশের আবার এমন ধারণাও জন্মেছে যে একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির অধীনে ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না, এমন সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত আগামীতে একটি জেতা নির্বাচনের সম্ভাবনা থেকে তাদের নিদারুণভাবে বঞ্চিত করতে পারে। অর্থাৎ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্য বিকল্প পথগুলো বিবেচনা না করে শুধু যে নামেই হোক, 'আমাদের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চাই'- এমন একটি কঠোর মনোভাব ক্ষমতাসীন জোটনেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরং খুশিই করবে বলে অনেকে মনে করেন। কারণ নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে শেখ হাসিনা তেমন কোনো অসাংবিধানিক কথা বলেননি। বলেছেন, সংবিধানে যে পথনির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করলে ক্ষমতাসীন জোটের ক্ষতি কোথায়? জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ জনতার সমর্থন থাকলে যেকোনো পদ্ধতির অধীনে একটি নূ্যনতম কারচুপিমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা গেলে ক্ষমতায় যাওয়াকে কেউ রোধ করতে পারে না। সীমাহীন বাধার মুখেও বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়। সে চেনা পথে অগ্রসর না হয়ে সমগ্র দেশকে একটি অজানা বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া সরকার কিংবা বিরোধী জোট, কোনো দেশপ্রেমিক শক্তির কাছেই কাম্য হতে পারে না। নীতির প্রশ্নে ১৯৮৬ সালে এরশাদ ঘোষিত নির্বাচন তৎকালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী জোট বয়কট করেছিল। তাতে নির্বাচন থেমে থাকেনি। তবে তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টি কিংবা তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জন্য তার পরিণাম শেষ পর্যন্ত শুভ হয়নি। জনগণের সুচিন্তিত ও শক্তিশালী ভূমিকা দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে তখন এক নীরব বিপ্লব সাধন করেছিল। তখন বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি এবং রাজনৈতিক অবস্থান ছিল এক সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায় তেজোদ্দীপ্ত ও অপ্রতিরোধ্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ঘিরে তখনো এত বহুমাত্রিক কায়েমি স্বার্থ ও চক্রান্তের বেড়াজাল সৃষ্টি হয়নি।
১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে তৎকালীন বিরোধী জোটের নেত্রী শেখ হাসিনার দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযোজিত করেছিলেন, আজ সে অবস্থা নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্রোতধারায় ইতিমধ্যে বহু জল গড়িয়ে গেছে। সেদিন জামায়াতে ইসলামী ছিল শেখ হাসিনার দাবির অন্যতম প্রধান সমর্থক এবং আন্দোলনের সরব সাথি। আজ সেই জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অনেকেই কারাবন্দি। তা ছাড়া বিরোধী দলের নেত্রী, তাঁর পুত্রদ্বয় এবং দলের অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা, যা ক্রমেই এখন আইনানুগভাবে আদালতের বিচার-প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ দুর্নীতির অভিযোগ কিংবা মামলাগুলোকে বিরোধী জোট যতই মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করুক না কেন, সরকার বলছে, তার কাছে যথেষ্ট সাক্ষীসাবুদ রয়েছে সেগুলোকে সত্য প্রমাণ করার। এ পরিস্থিতিতে কারাবন্দি জামায়াত ও অন্যান্য নেতাকে- হোক যুদ্ধাপরাধ, দুর্নীতি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে অভিযুক্ত- মুক্ত করার উপায় কী? তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আদায় করার দাবিতে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত করা? তেমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন জোট তাকে আরো ঢাকঢোল পিটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো, দুর্নীতি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে অভিযুক্তদের রক্ষা করার বিষয়টিকে জনসমক্ষে অত্যন্ত কার্যকরভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে এবং সে বিষয়টি শুধু দেশে নয়, বিদেশের গণমাধ্যমেও তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে ব্যাপকভাবে। তখন পরিস্থিতি উভয় পক্ষের বাড়াবাড়িতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দেশে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। শুধু সংবিধানবহির্ভূত অবাঞ্ছিত শক্তির আগমনই নয়, দেশে জরুরি অবস্থাও জারি করা হতে পারে। তার ফল শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে, তাও দেশের রাজনীতিসচেতন মানুষের ধারণার বাইরে নয়।
ওপরে উল্লিখিত একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখনো বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বলে চলেছে, যে নামেই হোক আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর ক্ষমতাসীন মহাজোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বলে যাচ্ছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে। কেউ কারো অবস্থান থেকে একটুও নড়ছেন না। আগামী সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র দেড় বছরের মতো। অথচ উল্লিখিত ওই একটি বিষয় ছাড়া নির্বাচন কমিশন কিংবা আর কোনো প্রাসঙ্গিক ব্যাপারে এখনো কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি। বিরোধী জোটকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ছাড়া বিকল্প অন্য কোনো প্রস্তাব থাকলে সংসদে গিয়ে তা পেশ করতে এবং একমাত্র বিকল্প প্রস্তাব নিয়েই সংসদের বাইরে কিংবা ভেতরে আলাপ-আলোচনা সম্ভব হতে পারে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন। কোনো অনির্বাচিত সরকার বা কর্তৃপক্ষের অধীনে আর কোনো জাতীয় নির্বাচন এ দেশে অনুষ্ঠিত হোক প্রধানমন্ত্রী তা চান না। তেমন একটি অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটও যদি একটি অনড় অবস্থানে বহাল থাকতে চায়, তা হলে বর্তমানে বিরাজমান এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান ঘটবে কিভাবে? একদিকে ১৮ দলীয় জোট ঘোষিত ১০ জুনের সময়সীমা পার হতে যেমন আর বেশি বাকি নেই, অন্যদিকে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র সংক্রান্ত মামলাগুলোও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে পরিণতির দিকে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তার রাজনীতির হাল ক্রমেই গুটিয়ে আনছে। তাতে বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণের সমর্থনের কথা বাদ দিলে বিরোধী জোটের সার্বিক অবস্থা ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন দৃশ্যত দলীয় কিংবা নিজ নিজ জোটগতভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নির্দয় লড়াইয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে। দলীয় অবস্থানগত কারণ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক কূট-কৌশল এবং নেতা-নেত্রীদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কাছে দেশের জনগণ যেন ক্রমেই আরো বেশি জিম্মি হয়ে পড়ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের দুটি বড় দলের রাজনৈতিক অবস্থানকে তাদের (জনগণের) অনেকেই চরম একগুঁয়েমি বলে মনে করছে। উল্লিখিত রাজনৈতিক মহলের কাছে এটাই যদি গণতন্ত্রের মূল কথা হয়ে থাকে; তা হলে দেশের চরম সংকটে জনগণের মতামত প্রকাশের আর অবকাশ কোথায়? ১৮ দলীয় জোট বলছে, তাদের দাবি মেনে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদ্ধতি আপাতত পুনর্বহাল না করা হলে তারা লাগাতার হরতাল-আন্দোলনে দেশ অচল করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে সংসদের বর্তমান বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হলে তারা তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জেলে রেখে (যানবাহন পোড়ানোর অভিযোগে) সংসদে যাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের ভাষায়, আগে তারা বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে। কিন্তু সে অবস্থাতেও বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে গণ-আন্দোলনের পাশাপাশি বিরোধী জোটের নির্বাচিত সদস্যদের সংসদে গিয়ে সব কথা তুলে ধরা অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বলে জনগণের সচেতন অংশ মনে করে। সংসদে জনগণের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের এত বড় একটি বাজেট পাস হবে কী করে? তা হলে জাতীয় সংসদে আর বিরোধী দলের প্রয়োজন কী? নির্বাচন নিয়ে এত রক্তপাত, এত হৈ চৈ করে আর লাভ কী? বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটকে সব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও তাদের সাংবিধানিক দায়-দায়িত্বগুলো পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। নতুবা সংসদ বর্জন করার বিরোধীদলীয় সংস্কৃতি এ দেশ থেকে তিরোহিত হবে না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ক্ষমতায় গেলেও সে সংস্কৃতি বহাল থাকবে। অর্থাৎ সংসদীয় গণতন্ত্র এ দেশে কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারবে না। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সে হিসাবে তারা তাদের মতো করেই সংবিধান সংশোধন করেছে। সে সংশোধনীগুলো বিএনপির নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিরোধী জোটের পছন্দ না-ও হতে পারে। সংসদে সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই ভবিষ্যতে তা প্রয়োজন বোধে আবার সংশোধিত হতে পারে। কিন্তু সংসদ বর্জন করে বাইরে বসেই সব কিছু হয়ে যাবে, এমনটা আশা করা যায় না। ১৯৯৫-৯৬তে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন দেশে নেই। সাংবিধানিক সংশোধনী বা পরিবর্তন, যা কিছু হয়েছে, সেগুলো আইনানুগভাবে অর্থাৎ বিধান মোতাবেক সুযোগ পাওয়ামাত্রই ক্ষমতাসীন মহাজোট তাদের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী করে নিয়েছে। তবে দেশে আইনের শাসন বহাল আছে কি না এবং বিচার বিভাগ ও প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে, সেগুলো ভিন্ন বিষয় হলেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এসব ব্যাপারে যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করাও বিরোধী দল বা জোটের দায়িত্ব বলে দেশের সচেতন মানুষ মনে করে। নতুবা বিরোধী শক্তি রাজনৈতিকভাবে তাদের জনসমর্থন হারিয়ে ফেলবে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট থেকে মাঝেমধ্যে আভাস পাওয়া যায় যে সামনে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি নিয়েও বিরোধী জোটের উচিত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা। তা ছাড়া নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে বর্তমান সংসদে নির্বাচিত আনুপাতিক হারে সদস্যদের নিয়ে কোনো অস্থায়ী সরকার গঠন করা সম্ভব কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে দুই পক্ষের একগুঁয়েমি দেশকে শুধু সংঘাত ও রক্তপাতের দিকেই ঠেলে দেবে, কোনো সমাধান দেবে না। এ অবস্থা দেশের বর্তমান নাজুক গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরো বিপর্যস্ত করবে। বিরোধী জোটের দেখা উচিত, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে, তারা আইনানুগভাবে ন্যায্য বিচার পাচ্ছে কি না। রাস্তায় আন্দোলন করে আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করা যাবে না। তার জন্য প্রয়োজন হবে যথাযথ আইনি লড়াই। দেশের বর্তমান সাংবিধানিক, আইনগত ও সার্বিক পরিস্থিতিগত অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাস্তব পরিস্থিতি বিএনপি-জামায়াত কিংবা তাদের সহযোগীদের পক্ষে সহায়ক নয়। এ প্রসঙ্গে বিরোধী জোটের প্রতি জনসমর্থন কিংবা তাদের পক্ষে গণ-আন্দোলনের বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখতে হবে। সরকার ক্রমেই বিরোধীদলীয় শীর্ষ রাজনীতিকদের বিভিন্ন অভিযোগে কারারুদ্ধ করছে। তার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে আরো অনেকে অন্তরীণ হতে পারেন। তাতে দেখা যাবে, শেষ পর্যন্ত দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলেও বিএনপিসহ তার সহযোগী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রীরা তাতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তেমন একটি পরিস্থিতিকে সামনে রেখে যদি মনে করা হয়, গণ-আন্দোলন কিংবা গণ-অভ্যুত্থানই হবে বিরোধী জোটের সব সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ, তাহলে সেটা বুমেরাংও হতে পারে। দেশ এক চরম বিশৃঙ্খল, অরাজকতা ও নৈরাজ্যের দিকে চলে যেতে পারে। সে রকম একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন ও উৎপাদনব্যবস্থা অত্যন্ত স্থবির হয়ে পড়তে পারে। সংঘাত ও রক্তপাতের যে আশঙ্কা এত দিন করা হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংবিধানবহির্ভূত শক্তির আগমনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেও গণতান্ত্রিকভাবে সংগত নয়, এমন ব্যবস্থাও নিতে হতে পারে। তাতে শেষ পর্যন্ত কেউ লাভবান হবে না। সে রকম একটি অবস্থা ডেকে আনা কোনো দেশপ্রেমিক ও প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক শক্তির কাজ হতে পারে না। সুতরাং আর সময় অপচয় না করে এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ত্যাগ করে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় জোটগুলোর জাতীয় স্বার্থে এক জায়গায় বসে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পেঁৗছা উচিত। নতুবা সমগ্র জাতির কাছে তারা দায়বদ্ধ হয়ে থাকবে তাদের স্বার্থপরতার জন্য। তাই উভয়েরই এখন গ্রহণযোগ্য বিকল্প পথ খোঁজা উচিত।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.