ফরিদপুরে প্রথম আলোর সাংবাদিক লাঞ্ছিত

ফরিদপুরে প্রথম আলোর প্রতিনিধি পান্না বালাকে লাঞ্ছিত করেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। শ্রমমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জনসভা নিয়ে গত শুক্রবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে ওই দিন সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে শহরের গোয়ালচামট মহল্লার শ্রীঅঙ্গনে ওই ঘটনা ঘটে।


এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ফরিদপুরে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে।
শ্রীঅঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা জগদ্বন্ধু সুন্দরের ১৪২তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মীয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, মন্ত্রীর বক্তব্যের পর সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে শ্রমমন্ত্রীর ভাই ‘সমাজসেবক’ খন্দকার মোহতেশাম হোসেন মঞ্চ থেকে নেমে প্রথম আলোর ফরিদপুর প্রতিনিধি পান্না বালার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁকে শ্রীঅঙ্গনের পুকুরপাড় এলাকার গেটের দিকে নিয়ে যান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক কে এম খায়রুদ্দিন ওরফে মিরাজ অকথ্য ভাষায় পান্না বালাকে গালাগাল দেন এবং খন্দকার মোহতেশামের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় খায়রুদ্দিনের সহযোগীরাও পান্না বালাকে গালাগাল করেন এবং তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁকে পেছন থেকে লাথি মারেন।
খন্দকার মোহতেশাম হোসেন, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী ও উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম হামলাকারীদের সরিয়ে নিরাপদ বেষ্টনী রচনা করে পান্না বালাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।
দুঃখপ্রকাশ: রাত পৌনে আটটার দিকে শ্রমমন্ত্রীর ভাই খন্দকার মোহতেশাম ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোকাররম মিয়া ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এসে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁরা সাংবাদিক লাঞ্ছনাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
লাঞ্ছনাকারীর শাস্তি দাবি: প্রথম আলোর সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ওই রাতেই ফরিদপুর প্রেসক্লাবে জরুরি সভায় বসেন সাংবাদিকেরা। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রেসক্লাবের সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা গতকাল শনিবার ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও কোতোয়ালি থানার ওসির কাছে ‘সাংবাদিক পান্না বালার ওপর হামলাকারী মিরাজ ও তাঁর সহযোগীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি প্রসঙ্গে’ শিরোনামে একটি সঞ্চারকলিপি দেন।
সঞ্চারকলিপিতে বলা হয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসী মিরাজ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার না করলে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশসহ রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হবে।
জেলা প্রশাসক হেলালুদ্দীন আহমদ ও পুলিশ সুপার মো. জামাল হাসান সঞ্চারকলিপি গ্রহণ করে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিক পান্না বালাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বক্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক কে এম খায়রুদ্দিন ওরফে মিরাজের মুঠোফোনে প্রথম আলোর ঢাকার কার্যালয় থেকে কল দিলে তিনি ‘পরে ফোন দেন’ বলে কেটে দেন। পরে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সভায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ: প্রথম আলোর সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার কিছুক্ষণ আগে ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোকাররম মিয়া ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহাতাব আলী গত শুক্রবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘রাস্তা বন্ধ রেখে শ্রমমন্ত্রীর জনসভা’ শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
পৌর মেয়র শেখ মাহাতাব আলী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আলীপুরের মোড়ে জেলা শ্রমিক লীগ রাস্তা বন্ধ করে সভা করবে, এ অনুমতি পৌরসভাই দিয়েছে। ওই রাস্তা পৌরসভার।’
প্রধান অতিথি শ্রমমন্ত্রী ধর্মীয় আলোচনার পর তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাস্যরসের মাধ্যমে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘তির্যক মন্তব্য করে আমাকে উন্নয়নের পথ থেকে সরানো যাবে না।’
সংবাদে প্রকাশিত ‘ডিসি ও এসপিকে ধমক’ দেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শহরের একজন মুরব্বি। কাজ আদায়ের জন্য আমি যে কাউকেই ধমক দিতে পারি। এটা দোষের নয়। এরপর আমি হালকা রসিকতা করে বলেছি, ডিসি এসপিকেও কাজ আদায়ের জন্য আমি ধমক দিতে পারি। কিন্তু পত্রিকায় এ বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে রসিকতাকে গুরুত্বপূর্ণ খবর হিসেবে প্রকাশ করায় আমার ও ফরিদপুরবাসীর সম্পর্কে সারা দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
প্রতিবেদকের বক্তব্য: গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে ফরিদপুর শহরের ব্যস্ততম এলাকা আলীপুরের মোড়ে জনসভা করে জেলা শ্রমিক লীগ। জনসভার কারণে দুপুর থেকে রাস্তার উভয় পাশ আটকে দেওয়ায় যানবাহনগুলো ঘুরে যেতে হয়। এতে শহরের অন্য সড়কে যানজট সৃষ্টি হলে পথচারী ও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শুক্রবারের প্রতিবেদনের একাংশে ওই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল।
তা ছাড়া ওই রাস্তার মালিক পৌরসভা বলে গত শুক্রবার পৌর মেয়র যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্য নয়। এ ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার রায় গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তাটি পৌর এলাকায় পড়লেও এর মূল মালিক সওজ। এর দেখভাল আমরাই করি।’

No comments

Powered by Blogger.