তাহিরপুর হাসপাতাল চিকিৎসকশূন্য! by গোলাম সরোয়ার

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। ছয় মাস ধরে এখানে কোনো চিকিৎসক নেই। বাধ্য হয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা রোগীদের চিকিৎসা-সহায়তা দিচ্ছেন।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তপন কুমার দাশ বলেন, ‘এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ডবয় দেয় প্রসূতিসেবা।


নৈশপ্রহরী দেয় জরুরি চিকিৎসা। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলার কারণে লোকজন এটিকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে।’
উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাওরবেষ্টিত এই উপজেলায় বেসরকারি কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতাল নেই। এখানকার লোকসংখ্যা দুই লাখের বেশি। এ ছাড়া আছে পার্শ্ববর্তী জামালগঞ্জ ও ধরমপাশা উপজেলার ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। তাদের সবার ভরসাস্থল তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু নাগরিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় চিকিৎসকেরা এখানে থাকতে চান না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী হীরক গোস্বামী জানান, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই এ অবস্থা চলছে। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) হিসেবে যোগ দেন আজাহারুল ইসলাম। পরের বছরের ২ আগস্ট তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি একেবারেই চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়ে। ইউএইচও মূলত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। তাই ওই চিকিৎসকের পক্ষে রোগী দেখা সম্ভব হতো না। সে অর্থে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২০০৯ সাল থেকে, অর্থাৎ তিন বছর ধরে চিকিৎসক নেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এখানে বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার একমাত্র পদসহ চিকিৎসা কর্মকর্তার ১০টি পদ শূন্য। ১০ জন সেবিকার মধ্যে আছেন একজন। সাকল্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫২টি পদ শূন্য।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তারবিহীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকি। নিজের কিছু হলে তখন কী করব?’
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ওয়ার্ডে রোগী আছে পাঁচজন, মহিলা ওয়ার্ডে একজন নারী ও তিনটি শিশু ভর্তি আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-সংলগ্ন ফার্মেসির মালিক পীযূষ কান্তি সরকার বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় রোগীদের শয্যা পেতে বেগ পেতে হয়। এখন শয্যা খালি পড়ে আছে। রোগী নেই।
জানা গেছে, উপজেলায় চারটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে। দুটিতে চিকিৎসক নেই। বালিজুরি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ইকবাল হোসেন বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত ইউএইচও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক না থাকায় রোগী ও তাঁর স্বজনেরা ডেলিভারির জন্য ওয়ার্ডবয়ের কাছে যেতে বাধ্য হয়।’
তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশপ্রহরী রামচরণ কর বলেন, চিকিৎসক না থাকায় রোগী আসাও কমে গেছে। যারা আসে, আমরা নানাভাবে চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন প্রসূতিরা। কারণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো দিনই গাইনি চিকিৎসক আসেননি। ওয়ার্ডবয় সালাউদ্দিন আহমদ প্রসূতি সেবার বিষয়টি দেখভাল করেন।
ওয়ার্ডবয় সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ডাক্তার না থাকায় আমাকেই ডেলিভারিসহ প্রসূতিদের চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। অধিকাংশ পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তারা জেলা শহরে যেতে পারে না। বাধ্য হয়েই আমাকে এ কাজ করতে হয়।’
জেলা সিভিল সার্জন এ টি এম এ রকিব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিখিতভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা সমস্যার সমাধান না করলে আমরা কী করতে পারি?’
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধরমপাশা) আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ডাক্তার দেওয়ার জন্য আমি জোর দাবি জানিয়েছি। আশা করছি শিগগির সমস্যার সমাধান হবে।’

No comments

Powered by Blogger.