এক কথায় অসাধারণ

মোশাররফ রুমী: এক কথায় বলা যায়, অসাধারণ। অনায়াসে। নির্দ্বিধায়। ‘ইত্যাদি’ জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। দীর্ঘ দু’যুগের পথচলায় সমৃদ্ধ। আকাশছোঁয়া সাফল্য আর দর্শকপ্রিয়তা এ অনুষ্ঠানটির অলঙ্কার। ইত্যাদির প্রতিটি অনুষ্ঠানই শুধু বিনোদন নয়, গণসচেতনতার অনবদ্য এবং নান্দনিক প্রয়াস। এবারও ঘটেনি তার ব্যত্যয়। অসাধারণ এক ‘ইত্যাদি’ই এবারও আমরা উপহার পেলাম গেল শুক্রবার। তুমুল দর্শক ভালবাসায় সিক্ত এ অনুষ্ঠানটি বরাবরই দেশীয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ তকমাটি ধরে রেখেছে। এবারের ইত্যাদির আয়োজন সে তকমাকে আরও বেশি রঙিন করে তুলেছে। আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদির মূল অনুষ্ঠান ধারণ শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে। এ স্থানটি এমনিতেই চমৎকার। ইত্যাদি ধারণের ক্ষেত্রে এতে বর্ণিল আলোর সংযোজন সে চমৎকারিত্বে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সে সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন সেট তৈরি করেছে এক অন্য রকমের আবহ। প্রতিবারের মতো এবারের ইত্যাদিতেও ছিল তথ্য, শিক্ষা, বিনোদনের সমাহার। ছিল কিছু মানবিক, সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বই ছিল দারুণ আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য। সে সঙ্গে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হানিফ সংকেতের ছন্দময় উপস্থাপনা বরাবরের মতো এবারও দর্শক হৃদয়ে দারুণ ঝড় তুলেছে। এবারের ইত্যাদিতে প্রচার হওয়া ৩২ বছর ধরে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার এড্রিক বেকারের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ওপর মানবিক প্রতিবেদন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতা মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ বিজয়ী চার বাংলাদেশী তরুণের ওপর প্রতিবেদনগুলো খুব ভাল লেগেছে। এ প্রতিবেদন দু’টির প্রথমটি থেকে আমরা শিখতে পেরেছি একমাত্র ইচ্ছাশক্তির গুণেই সব সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এসে কি দারুণ একাগ্রতা নিয়ে মানবসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়া যায়। আর দ্বিতীয়টি থেকে শিখেছি ঐকান্তিক সাধনা থাকলে আমরাও পারি অনায়াসে বিশ্বজয় করতে। প্রসঙ্গক্রমে একটি কথা বললে বোধ করি বেশি বলা হবে না- এমন বড় মাপের অবদান রাখার জন্য ডাক্তার এড্রিক বেকারকে আমাদের দেশের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। বরিশালের রেজাউল ও তার পোষা পায়রার ওপর দেখানো প্রতিবেদনটি আমাদের শিখিয়েছে সত্যিকারের ভালবাসা জয় করে নিতে পারে যে কোন কিছুই। এসব প্রতিবেদনের পাশাপাশি চার খ্যাতিমান শিল্পী এন্ডু্র কিশোর, রফিকুল আলম, শবনম মুশতারী এবং ফাতেমা-তুজ-জোহরার গাওয়া বিজয় গৌরব ও আগামীর আহ্বান নিয়ে পরিবেশিত গানটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে দারুণভাবে। এছাড়া অর্জুন ও চান্নুর বিদ্রুপাত্মক গান, স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে নাচ, দর্শক পর্ব, মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি পর্ব এবং বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি ও সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে সাজানো নাট্যাংশগুলোতে ফুটে উঠেছে তীব্র কটাক্ষ। আর এসব মিলিয়েই আবারও অসাধারণ একটি ‘ইত্যাদি’ উপহার দেয়ায় ধন্যবাদ হানিফ সংকেতকে সে সঙ্গে সাধুবাদ ইত্যাদির নিয়মিত সঙ্গী স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠান কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডকে।

No comments

Powered by Blogger.