সন্ত্রাসীদের ঈদ সফর পুলিশে তোলপাড় by সাহাদাত হোসেন পরশ

দের আগে রাজধানী ঘুরে গেছে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী। ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমাম হোসেন ও মোহাম্মদ আলী ঈদের আগে সীমান্তপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আলী বিজয়নগরে এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করে নিয়মিত তার শিষ্যদের টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যায়। মূলত গুলশানে দুই বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে হত্যার টার্গেট নিয়ে তারা রাজধানীতে আসে। ঈদে গরু ব্যবসায়ী সেজে যশোর ও ফেনী দিয়ে তারা সীমান্ত পার হয়। ২ কোটি টাকার চুক্তিতে রাজধানীতে পা রাখে ইমাম হোসেন ও মোহাম্মদ আলী।


দীর্ঘদিন পর দুই সন্ত্রাসীর আকস্মিক ঢাকা সফরের বিষয়টি টের পেয়ে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। টের পেয়ে সহযোগীদের সঙ্গে সব ধরনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে রাজধানী ছাড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই ত্রাস।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ঈদের ক'দিন আগে ভারতে পলাতক কয়েক শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজধানীতে আসে_ এমন তথ্য পাওয়ার পর তারা খোঁজ নিতে শুরু করেন। এরপর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইমাম হোসেন ও মোহাম্মদ আলী রাজধানীতে এসে বেশ ক'দিন অবস্থান করেছে। এ সময় তারা কয়েক বিশ্বাসভাজন সহযোগীর সঙ্গে অত্যন্ত গোপনে বৈঠক করে। রাজধানীতে অবস্থানকালে তারা কালো কাচের গাড়িতে চলাফেরা করেছে। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দুই সন্ত্রাসী রাজধানীর কোথায়
কোথায় অবস্থান করেছে_ এমন কয়েকটি স্থান শনাক্ত করেন।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই মুকুটহীন সম্রাট গুলশানের দুই বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে হত্যার টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশে আসে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে_ গরু ব্যবসায়ী সেজে তারা বাংলাদেশে ঢোকে। গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে ঈদের আগের দিন খাওয়া-দাওয়া করে গুলশানের এক ব্যবসায়ীকে খুন করার চূড়ান্ত ছক করে মোহাম্মদ আলী। সেখান থেকে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে বৈঠক করা হয়। বিষয়টি টের পেয়ে গোয়েন্দারা মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং শুরু করেন। একপর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি টের পেয়ে সহযোগীদের সঙ্গে আর কোনো ধরনের যোগাযোগ না করেই রাজধানী ছাড়ে দুই সন্ত্রাসী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ছানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, দুই সন্ত্রাসীর রাজধানীতে প্রবেশের খবর জানতে পেরে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। গোয়েন্দা তৎপরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা পালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তৎপরতার মুখে দুই সন্ত্রাসী কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারেনি বলে দাবি করেন তিনি।
পুুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, যে দুই ব্যবসায়ীকে হত্যার টার্গেট করে ইমাম হোসেন ও মোহাম্মদ আলী রাজধানীতে আসে তাদের মধ্যে এক ব্যবসায়ীর পুরান ঢাকায় লোহার ব্যবসা রয়েছে। টার্গেট করা দুই ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। একজন সরকারদলীয় রাজনীতিক, অন্যজন বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দারা এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন, রাজনৈতিক বিরোধিতা নয়, ব্যবসায়িক বিরোধেই তাদের হত্যার টার্গেট করা হয়।
দুই সন্ত্রাসীর বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি কীভাবে টের পেলেন_ এমন প্রশ্নের জবাবে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে ইমাম হোসেন ও মোহাম্মদ আলীর শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে। রাজধানীতে ঢোকার পরপরই প্রতিপক্ষরা গোয়েন্দাদের তাদের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়। এরপরই নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। একসময় রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিবাগ, মহাখালী, গুলশান এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত ইমাম হোসেন ও মোহাম্মদ আলী। বেশ ক'বছর ধরে তারা পলাতক।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডে চলছে নতুন মেরুকরণ। অনেকে নতুন বাহিনী গড়ে তুলছে। অনেকে আবার পুরনো শিষ্যদের দলে টানার চেষ্টা করছে। বর্তমানে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় পুরান ঢাকার ত্রাস ডাকাত শহীদের সহযোগীরা। প্রায় প্রতিদিনই ডাকাত শহীদের সহযোগীরা ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা দাবি করছে। ডাকাত শহীদের নাম ব্যবহার করে টেলিফোনে চাঁদা দাবির ঘটনা যেন নিত্যদিনের চিত্র। গত বছরের ৭ জানুয়ারি বিকেলে জিঞ্জিরা বাজারে সুপারি ব্যবসায়ী হাজি শওকত হোসেনের ওপর গুলি চালিয়ে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় স্থানীয় লোকজন সবুজ ও সুমন নামে দুই চাঁদাবাজকে দুটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে গণধোলাই দেয়। ওই ঘটনার দু'মাস আগে ডাকাত শহীদ পরিচয় দিয়ে তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ায় তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। জিঞ্জিরা বাজারের আটা-ময়দা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের কাছে ডাকাত শহীদের নাম ব্যবহার করে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়ার অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীরা তার ডান হাতে গুলি করে পালিয়ে যায়। এর আগে তেল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে ডাকাত শহীদ পরিচয় দিয়ে ফোনে হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। ডাকাত শহীদের মতো পলাতক আরও ক'জন তাদের দল গোছানোর চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.