পবিত্র কোরআনের আলো-কোনো আমলকারীর আমলই নষ্ট হবে না, সে নারী হোক কিংবা পুরুষ

১৯৫. ফাস্তাজাবা লাহুম রাব্বুহুম আন্নী লা উদ্বী'উ 'আমালা 'আমিলিম মিন্কুম মিন যাকারিন আও উন্ছা; বা'দ্বুকুম মিম বা'দ্বি; ফাল্লাযিনা হাজারূ ওয়া উখ্রিজূ মিন দিইয়ারিহিম ওয়া ঊযূ ফী সাবীলী ওয়া ক্বাতালূ ওয়া ক্বুতিলূ লা-উকাফ্ফিরান্না 'আন্হুম সায়্যিআতিহিম ওয়ালা উদ্খিলান্নাহুম জান্নাতিন তাজ্রি মিন তাহ্তিহাল আন্হার; ছাওয়াবাম মিন 'ইন্দিল্লাহ; ওয়াল্লাহু 'ইন্দাহূ হুস্নুছ ছাওয়াব।


১৯৬. লা-ইয়াগুর্রান্নাকা তাক্বাল্লুবুল্লাযীনা কাফারূ ফিল বিলাদ।
১৯৭. মাতা'উন ক্বালীলুন; ছুম্মা মাওয়াহুম জাহান্নাম; ওয়াবি'সাল মিহাদ। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫-১৯৭]
অনুবাদ : ১৯৫. অতঃপর তাঁদের প্রতিপালক এই বলে তাঁদের ডাকে সাড়া দিলেন_আমি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তোমাদের যে কেউ ভালো কাজ করছ, তাঁদের কোনো কাজ কক্ষনো বিনষ্ট করব না। আর নারী-পুরুষ তোমরা তো একে অপরেরই অংশ। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা হিজরত করেছ, যাদেরকে নিজেদের জন্মভূমির ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, আমার পথে এসে যারা নির্যাতিত হয়েছে, যারা লড়াই করেছে এবং যারা আমার (আল্লাহ্র) পথে জীবন দিয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের গুনাহ মাফ করে দেব। অবশ্যই আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার তলদেশ দিয়ে নদী বয়ে গেছে। এ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার। আর উত্তম পুরস্কার তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে।
১৯৬. (হে নবী) যারা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য, তারা যখন শহরগুলোতে সদম্ভ পদচারণা করে, তখন তা যেন আপনাকে বিভ্রান্ত না করে।
১৯৭. (কারণ) এগুলো কয়েক দিনের উপকরণ মাত্র। এরপর তাদের নিবাস জাহান্নাম। আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল!
ব্যাখ্যা : ১৯৫ নম্বর আয়াতের শানে নুজুল এ রকম_উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, হিজরতকারী পুরুষদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অনেক জায়গায়ই প্রশংসা করেছেন। কিন্তু হিজরতকারী নারীদের সম্পর্কে তো কোথাও কিছু বলেননি। আমরা মুহাজির নারীরা কি হিজরতের কোনো সওয়াব পাব না? তখন এই আয়াতটি নাজিল হয়।
এ আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, 'কোনো উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীর কর্মই বিফলে যাবে না, সেই কর্ম সম্পাদনকারী পুরুষ হোক কিংবা নারী।' অর্থাৎ, কর্মের প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। এই আয়াতে উত্তম কাজ বা আমল হিসেবে প্রধানত হিজরতের প্রসঙ্গ এসেছে। হিজরত তৎকালীন ইমানদারদের জন্য ছিল এক মহান ত্যাগ। তাঁরা মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে সর্বস্ব ছেড়ে কপর্দকহীন অবস্থায় অন্যের আশ্রয়ে গিয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, আল্লাহর পথে অবস্থান নেওয়ায় নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁরা যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। যুদ্ধ করে অনেকে জীবন দিয়েছেন। তাঁদের জন্য আল্লাহ তায়ালা উত্তম প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
১৯৬-৯৭ নম্বর আয়াতে এই পৃথিবীতে কাফিরদের বাহাদুরি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে রাসুলকে বিভ্রান্ত না হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আসলে এই উপদেশ কেবল রাসুলের জন্য নয়, সব উম্মতের জন্য। দৃশ্যত আমরা দেখি, আল্লাহর অবাধ্য এবং পাপকাজে লিপ্ত মানুষেরা শহরগুলোতে সদম্ভে বিচরণ করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তারা যদি আল্লাহর অপ্রিয়ই হবে, তাহলে তাদের এত প্রভাব-প্রতিপত্তি কেন! আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এটা খুব স্বল্প সময়ের বাহাদুরি। তাদের প্রকৃত ঠিকানা জাহান্নাম; এবং সেটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.