চরাচর-মাশরুমের নানা কথা by আলম শাইন

মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক। শ্রেণীগত দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মাশরুম একটি নিম্ন শ্রেণীর ছত্রাকের আওতায় পড়ে। ফলে এটা ছত্রাক দলের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে সবজি হিসেবে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে আজকাল মাশরুম বেশ জনপ্রিয় পুষ্টিকর একটি খাবার ও পথ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ধরা যাক মাশরুমের কফির কথা। এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয় এটি।


আমাদের দেশের মানুষ এটি নিয়ে বিরূপ প্রচারণার কারণে মাশরুম খাদ্য তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে। অবশ্য উপমহাদেশে একসময় এটা রাজকীয় খাদ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোগল সাম্রাজ্য বিস্তারের আগের রাজরাজড়ারা বেশ তৃপ্তির সঙ্গে মাশরুম ভক্ষণ করতেন। অপরদিকে, গ্রিকরা এটাকে যোদ্ধাদের শক্তিবর্ধক খাবার হিসেবে জানতেন। রোমানরা তো একে সরাসরি ঈশ্বরের খাবার হিসেবে প্রচার করেন। আর চীন জাতি মাশরুমকে বলে 'লিংঝি', অর্থাৎ রাজার খাবার। জাপানিরা তাদের দীর্ঘায়ুর রহস্যের জনক হিসেবে জানে অচ্ছুৎ এই মাশরুমকে। আর বাংলাদেশের মানুষ জানে এটাকে 'ব্যাঙের ছাতা' হিসেবে। বলতে গেলে, বিশ্বের সব ধর্মাবলম্বী মানুষই মাশরুমকে হালাল খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীতে প্রায় ৩৮ হাজার প্রজাতির মাশরুম রয়েছে। তন্মধ্যে দুই হাজার প্রজাতির মাশরুম খাওয়ার উপযোগী। বাকি প্রজাতিগুলো বিষাক্ত। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের দেশের 'ব্যাঙের ছাতা' (বিষাক্ত মাশরুমকে বলা হয় 'টোডস্টুল' বা ব্যাঙের ছাতা)। খাওয়ার উপযোগী মাশরুমগুলোর মধ্যে মাত্র ২০০ প্রজাতির রয়েছে ভেষজ গুণ। আবার এই ২০০ প্রজাতির মধ্যে লাল রঙের মাত্র ছয়টি মাশরুম হচ্ছে সর্বোচ্চ ভেষজ গুণসমৃদ্ধ। এই ছয়টি মাশরুমকে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে মাত্র একটি মাশরুমে রূপান্তরিত করেছে মালয়েশিয়ান (ডিএঙ্এন গ্যানোডর্মা) কম্পানি, যার উপকারিতার শেষ নেই। এটা বিভিন্নভাবে মানবদেহে কাজ করে রোগপ্রতিরোধ-ক্ষমতা বাড়িয়ে মানুষকে দীর্ঘজীবী করে তোলে। মাশরুমে রয়েছে প্রচুর আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল, যা মানবদেহের 'ইমিউনিটি সিস্টেম'কে সমৃদ্ধ করে। এ ছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন 'ডি', লিংকজাই-৮ (হেপাটাইটিস 'বি' জন্ডিসের প্রতিষেধক)। আছে বেটা-ডি, গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, ট্রাইটারপিনওয়েড ও বেনরজাপাইরিন (ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক)। মাশরুমে স্ফিঙ্গলিপিড এবং ভিটামিন, -১২ বেশি থাকায় নার্ভ স্পাইনাল কর্ড সুস্থ রাখে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ দূর হয়। শুধু তাই-ই নয়, মাশরুম প্রতিনিয়তই খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে হজমে সহায়ক, রুচিবর্ধক এবং অ্যালার্জি সমস্যা দূর হয়। এমনকি চুল পাকা ও ঝরা দুটোই রোধ করে। মাশরুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউক্লিক এসিড এবং অ্যান্টি-অ্যালার্জেন থাকায় কিডনি সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। এবং এতে এডিনোসিন থাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আমাদের হাতের নাগালে এত সমৃদ্ধিশালী সবজি থাকা সত্ত্বেও এ খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি শুধু প্রচারের অভাবে। অথচ ইচ্ছা করলেই আমরা যেখানে-সেখানে মাশরুম চাষ করে সবজি হিসেবে খেয়ে পরিবারের পুষ্টির অভাব দূর করতে পারি। উল্লেখ্য, এটা চাষে খরচ খুব একটা নেই। নেই ক্ষেত-খামারের প্রয়োজন। বাড়ির আঙিনা কিংবা পরিত্যক্ত কক্ষ হলেও অনায়াসেই মাশরুম চাষ করা যায়। এতে সবজির চাহিদা যেমন পূরণ হয়, তেমনি আর্থিকভাবেও উপকৃত হওয়া যায়।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.