পুরোনো রাজার পাশে নতুন রানী-ভাষান্তর: সোলায়মান পলাশ

একজনের তৃতীয় শিরোপা, আরেকজনের প্রথম। তা হোক, তবে দুজনেরই সাফল্যের অনুভূতি প্রায় অভিন্ন। ২০১২ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর সার্বিয়ার নোভাক জোকোভিচ এবং বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা মুখোমুখি হয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের।


তাঁদের সাক্ষাত্কারের চুম্বক অংশ এখানে তুলে দেওয়া হলো

‘সত্যিই আমি কেঁদেছি’
 এটাই কি আপনার জীবনের সেরা জয়?
নোভাক জোকোভিচ: হ্যাঁ। এখন এটাই। এর আগে ছিল উইম্বলডন। কারণ ওটাই সেই প্রতিযোগিতা, যা জেতার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু এখন এটাই সবার ওপরে থাকবে। আমরা ছয় ঘণ্টা খেলেছি, এই একটা তথ্যই কারণ হিসেবে যথেষ্ট। অবিশ্বাস্য, অবিশ্বাস্য! এটা গ্র্যান্ড স্লাম ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম ফাইনাল, এই তথ্য জানার পর সত্যিই আমি কেঁদেছি।
 নাদাল বলেছে ম্যারাথন ফাইনালের কষ্টটা তিনি উপভোগ করেছেন। সবকিছুই তো এই সাফল্য পাওয়ার জন্যই?
জোকোভিচ: আমি তাঁর সঙ্গে পুরোপুরি একমত। কয়েকটা ম্যাচে আমারও এ রকমই মনে হয়েছিল, কিন্তু এদিনের মতো না। আপনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কষ্ট ভোগ করছেন, পা দুটোকে সচল রাখতে চেষ্টা করছেন। এখানেই শেষ নয়, তার পরও আপনি লড়াই করছেন আরেকটি পয়েন্টের জন্য, আরেকটি গেম জেতার জন্য। পায়ের আঙুল ফেটে রক্ত ঝরার মতো কষ্টের মধ্য দিয়েই যেতে হবে আপনাকে। কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। তার পরও ব্যথাটা আপনি উপভোগই করবেন। তাই আমি রাফার মন্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত।
 ম্যাচের পর শার্ট ছিঁড়ে উদ্যাপন করা নিয়ে কিছু বলবেন? রাতে আরও উত্সব করার শক্তি কি আছে?
জোকোভিচ: জানি না। জানি না, কত কী করতে পারব। তবে আমি এখন সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত।
 হয়তো সকালের নাশতা করবেন?
জোকোভিচ: সকালের নাশতা?
 হ্যাঁ...
জোকোভিচ: জানি না। আমার মাথায় এখন খাওয়ার ব্যাপারটাই নেই।
 ২০১১ সালে তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন। এ বছরও সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে চাচ্ছেন। চারবারই কি এমন কষ্টের মুখোমুখি হতে চান?
জোকোভিচ: হ্যাঁ, ব্যাপারটা যদি এ রকমই দাঁড়ায়, আমার মনে হয় আমি এর মধ্য দিয়েই যাব। বছরের বাকিটা সময় শারীরিকভাবে আমি কতটা কষ্ট সহ্য করতে পারব, তা নিয়ে চিন্তিত নই। এখন সপ্তাহ দুয়েকের বিশ্রাম পেতে যাচ্ছি। চেষ্টা করব জয়টাকে যতটা সম্ভব উপভোগ করতে। এরপর তো কাজে ফিরতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার জন্য অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। তবে আমি এখন বর্তমানকেই উপভোগ করতে চাই।
 ৩১ শটের সেই র‌্যালিটার পর আপনি তো মেঝেয় শুয়ে পড়লেন। তখন কি একবারও মনে হয়নি শুয়েই থাকি, গত বছরটা তো অসাধারণ কেটেছে আর ওঠার দরকার নেই?
জোকোভিচ: না, ওই সময় মনে হয়নি। ওই সময় আমার মাথায় ছিল যতটা সম্ভব শ্বাস নিয়ে নেওয়া ও পরের পয়েন্ট পাওয়া নিয়ে ভাবা।
মাথায় তো হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খায়। ভুল থেকে শুদ্ধকে আলাদা করা, পরের পয়েন্টটা কীভাবে পাওয়া যাবে সেটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি, ইত্যাদি।
 শেষ গেমে ব্রেক পয়েন্টের পর আপনি কি প্রার্থনা করেছিলেন?
জোকোভিচ: হ্যাঁ। আমি চেষ্টা করছিলাম যতটা পারি সাহায্য ও শক্তি পেতে। আমার ধারণা ওটা কাজে লেগেছে।
 বেচারা রাফার জন্য দুঃখ-টুঃখ হয় না? সে বারবার আপনার সঙ্গে ফাইনালে হারছে।
জোকোভিচ: বছর দুয়েক আগে তো আমি ওই অবস্থানে ছিলাম। বেশির ভাগ সেমিফাইনাল আর ফাইনালেই তো তাঁর (নাদাল) ও রজারের কাছে হেরেছি। তাই জানি অনুভূতিটা কী রকম। আমরা আজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। দুর্ভাগ্যজনক হলো, দুজন তো আর জয়ী হয় না।
 পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বসার জন্য চেয়ার দেওয়াতে আপনি কি খুশি হয়েছেন?
জোকোভিচ: ওহ হ্যাঁ, আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার মনে হয় আমরা দুজনেই খুশি হয়েছি। আমরা জানতাম অনুষ্ঠানটা কতটা লম্বা হতে পারে। সবারই কিছু না কিছু বলার ছিল। ভাবছিলাম তারা যদি আমাদের অবস্থাটা বুঝত, তারা সেটা বুঝেছে। তাই ওই চেয়ারের জন্য তাদের ধন্যবাদ দিয়েছি। এটা আমাদের পা দুটোকে বাঁচিয়েছে।

‘স্বপ্ন সত্যি হয়েছে’
 র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ও প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম দুটোই পেয়েছেন। কোনটা বেশি আনন্দের?
ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা: আমি জানি না। এখন আমার মধ্যে নানা রকম অনুভূতি কাজ করছে। জয়ের পর বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না টুর্নামেন্টটা শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত আসতে লম্বা সময় পাড়ি দিতে হয়েছে।
 আপনি কি মনে করেন নিখুঁত একটা ফাইনাল খেলেছেন?
আজারেঙ্কা: আমি কি নিখুঁত ম্যাচ খেলেছি...আমার মনে হয় না সবকিছু নিখুঁত হয়েছে। শুধু শেষটাই নিখুঁত হয়েছে? আমি শুধুই আমার প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো খেলতে চেয়েছি। প্রথম দুটি গেমে কিছুটা বিপর্যয় হয়েছিল। এরপর তো নিজেকে ফিরে পেলাম।
 অনেক মেয়েকেই প্রথম গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে এসে ঘাবড়ে যেতে দেখা যায়। সাফিনা ও আপনার দেশের নাতাশা জভেরভার এ রকম হয়েছে। আপনার না হওয়ার কারণ কী?
আজারেঙ্কা: কি, আপনাদের মনে হয়নি যে আমি নার্ভাস ছিলাম?
 এই অর্থে যে তাঁরা তো মোটেই খেলতে পারেননি...
আজারেঙ্কা: আমিও খুব নার্ভাস ছিলাম। কোর্টে যেয়ে খেলার জন্য আমার তর সইছিল না। অপেক্ষাটা অনেক দীর্ঘ ছিল। ব্যাপারটা কিছুটা এ রকম, আমি প্রস্তুত। কিন্তু সময়টা আসছে না।
 বছরের বাকি দিনগুলোয় আরও গ্র্যান্ড স্লাম জিততে কী করতে চান?
আজারেঙ্কা: আমি একই রকমভাবে খেলে যেতে চাই। টুর্নামেন্ট ধরে ধরে ভাবাটাই আমার কাছে সহজ।
 কতটা ভালো খেলেছেন সেটা ভেবে আপনি কি অবাক? প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে মাত্র তিনটি গেম হেরেছেন...।
আজারেঙ্কা: অবাক হয়েছি, আবার হইওনি। আমি বলতে চাচ্ছি আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি ও বেশ ভালো খেলেছি। স্কোরটা সব সময় আসল জিনিসটা বোঝাতে পারে না। প্রথম সেটে বেশ ভালোই লড়াই করতে হয়েছে আমাকে। আমি শুধু গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্তে ভালো খেলেছি।
 আপনি এখন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আজারেঙ্কা: স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে। গ্র্যান্ড ম্লাম জেতার স্বপ্ন ছিল, কঠোর পরিশ্রম করেছি। এক নম্বর হওয়াটা বাড়তি পাওনা।
 আপনি মনে করেন এই জয় আপনার দেশের টেনিসকে আরও সামনে এগিয়ে দেবে?
আজারেঙ্কা: আমিও তা-ই আশা করি। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য অনেক অনুপ্রেরণা জোগাবে এটা।
 গ্র্যান্ড স্লামটা কি একটু তাড়াতাড়ি পেয়ে গেলেন অথবা পেতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল?
আজারেঙ্কা: এভাবে ভাবতে চাই না, আমি বরং বলব এটা পেতে এত দিন খেলতে হয়েছে। এটা পাওয়ার জন্য ধাপে ধাপে এগোতে হয়েছে আমাকে। কিছু বাধা পেরোতে সময় লেগেছে। যেমন সেমিফাইনালে হার, কিছু কোয়ার্টার ফাইনালে হার; অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লেগেছে।
 আপনি তো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে সব সময় স্বস্তি বোধ করতেন না। নিজেই বলেছিলেন এটা। এখন মনে হচ্ছে আপনি সব সময়ই ওটা পছন্দ করতেন। সেই লাজুক মেয়েটা কীভাবে বদলে গেল?
আজারেঙ্কা: আমার দল, আমার এজেন্ট কিছুটা সাহায্য করেছে। আপনি কোর্টে কী করছেন সেটা দিয়েই অনেকে আপনাকে বিচার করবে। কিছু লোক আপনার নির্দিষ্ট কোনো কাজ দিয়েই বিচার করবে আপনাকে। অনেক সময় এখানেই ভুল হতে পারে। কোর্টের বাইরে আমি ভিন্ন একজন মানুষ। এটা আমাকে উদার হতে ও নিজের মতো হওয়ার গুরুত্বটা বুঝতে সাহায্য করেছে। আপনি যা নন, তা হওয়ার ভান না করাই ভালো। আমি সব সময় নিজের অনুভূতিটা বোঝার চেষ্টা করি। কারণ এটা তো লুকানোর জিনিস না। আপনি যদি নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, আপনি যদি নিজের অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারেন, আপনি স্বীকার করতে পারবেন আপনি কী ভুল করেছেন, কোন কাজটা ঠিক করেছেন। এভাবে সহজে সবকিছুই করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.