পশু জবাই ও মাংসের মান-শুধু বিল পাস নয় নিশ্চিত হোক আইনের প্রযোগ

অনেকটা নীরবে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদ। বুধবার জাতীয় সংসদে সরকার অনুমোদিত জবাইখানার বাইরে এবং সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পশু জবাই করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ_এই বিধান রেখে 'পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১১' পাস হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এই বিলে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য


কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করতে পারবে না। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জবাইখানা বা মাংস বিক্রয় ব্যবস্থাপনা এবং মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করতে পারবে না। ইস্যু করা লাইসেন্স এক বছর পরপর নবায়ন করতে হবে। জবাইখানা এবং মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানার কর্মী ও বিক্রেতাকে ছোঁয়াচে এবং সংক্রামক রোগমুক্ত থাকতে হবে। উল্লেখ্য, বিলে অপরাধ ও বিচার সম্পর্কে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ অনুসারে বিচার হবে। কোনো ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা নূ্যনতম পাঁচ হাজার এবং অনূর্ধ্ব ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
দেশে বহুকাল ধরে যত্রতত্র পশু জবাই, জবাইকৃত পশুর বর্জ্য ফেলা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংস বিক্রি এবং প্রক্রিয়াকরণের কাজ আমরা দেখে আসছি। কণ্ঠভোটে পাসকৃত এ বিলটি আইনে পরিণত হলে এসব প্রবণতা কমতে বাধ্য। শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, যেখানে সেখানে পশু জবাইয়ের দৃশ্য কোমলমতি শিশুদের এবং স্পর্শকাতর মানুষদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। পশু জবাই ও বিক্রির এসব নেতিবাচক ফলাফলের কথা মাথায় রেখে বিশ্বের বহু দেশ, বিশেষ করে উন্নত বিশ্ব তো বটেই, জবাইখানা বা স্লটার হাউস ছাড়া অন্যত্র পশু জবাই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। আমরা আরো লক্ষ করি, মাংস বিক্রির ব্যাপারে কোনো নিয়মকানুন মানা হয় না। পচা মাংসও দেদার বিক্রি করা হয়ে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত মাংস বিক্রি না হয় ততক্ষণ তা ক্রেতাদের জন্য ঝুলে থাকে। মাংস অবিক্রীত থাকলে তা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হিমায়িত করে রাখা হয়। কসাইখানার কর্মীদের মধ্যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসচেতনতা নেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে এত বড় সমস্যা বিষয়ে এতদিন এ ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। সরকার এ বিলটি পাসের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবে সারা দেশে হাজার হাজার জবাই করার স্থান রয়েছে, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে জনগণ যেখানে সেখানে পশু জবাই করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। একদিকে যেমন পাসকৃত আইনটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে তেমনি দেখতে হবে, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে যত্রতত্র কোনো রকম পশু জবাইয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যক্রম যেন না ঘটে। এসব প্রশাসনিকভাবে নজরদারি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.