আবার এসআই খুন-পুলিশের নিরাপত্তাও কি হুমকির মুখে?

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মিরাজুল সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়ার পর এখন পুলিশের নিরাপত্তার প্রশ্নটাই যেন প্রকট হয়ে উঠেছে। এসআই মিরাজুলের খুনের ঘটনা নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গেছে।


দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো এবং অনেক উন্নতিও হয়েছে বা হচ্ছে বলে অনেককে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে দেখা যায়। এটাই কী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির নমুনা? গত ১১ বছরে সন্ত্রাসীদের সরাসরি টার্গেটে খুন হয়েছেন শতাধিক পুলিশ সদস্য। অন্যদিকে দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৪৮ পুলিশ সদস্য। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিরাজুলের খুনের ঘটনা প্রমাণ করল, দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও এখন নিশ্চিত নয়। মিরাজুলের খুনের ঘটনাকে নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে কি এড়িয়ে যাওয়া যাবে? সন্ত্রাসীরা কি দেশটাকে তাদের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছে, এ প্রশ্নটাও এখন একটি বড় প্রশ্ন। রাজধানীর সাব-ইন্সপেক্টর গৌতম রায়, সিলেটের বিয়ানীবাজারের অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মুনায়েমুল ইসলাম, দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানায় কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর কনকুজ্জামান ফারুকী, পুলিশ ইন্সপেক্টর নূরুল আলম ও সাব-ইন্সপেক্টর আলমগীর, সিআইডির ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম, গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান, পাংশার ওসি মিজানুর রহমান, এএসআই আমিনুল ও হাবিলদার লিয়াকত, কনস্টেবল ছায়েদুল, শাহ আলম এবং কনস্টেবল আজাদসহ আরো অনেকের নামের তালিকায় যুক্ত হলো এসআই মিরাজুলের নাম।
আমাদের দেশের পুলিশ সদস্যদের কাজের মধ্যে একটা ঝুঁকি সব সময় থাকে। ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয় তাঁদের। নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে পুলিশকে কাজ করতে হয়। পুলিশের প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি নেই, চাহিদার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা কম। এসব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পুলিশ সদস্যরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আবার দুষ্টের দমন করতে গিয়ে পুলিশকেও অনেক সময় দুষ্টচক্রে বাঁধা পড়তে হয়। জনগণের বন্ধু পুলিশকে জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে হয়। কিন্তু এই নিরাপত্তা বিধান করতে গিয়ে যখন পুলিশের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়ে, তখন? ১১ বছরে ৩৪৮ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়া এবং সন্ত্রাসীদের সরাসরি টার্গেটে শতাধিক পুলিশ সদস্য খুন হওয়ার পর এখন পুলিশের নিরাপত্তার প্রশ্নটিই বড়। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে পুলিশের হাতে অর্পিত, সেই পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহ এমনিতেই একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা। এই এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসীর তৎপরতা এখনও দেখা যায়। এই এলাকার মানুষকে এখনো অনেকটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করতে হয়। অনেক জায়গাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পেঁৗছতে পারে না। গত ১০ বছরে ঝিনাইদহ এলাকায় ৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলার কিনারা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে পুলিশ বাহিনীকে। পুলিশকে আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত করতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশের জনবল বাড়ানো দরকার। বদলাতে হবে এর কাঠামো। পুলিশকে আধুনিক একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটা করতে না পারলে মিরাজুলদের জীবন যাবে, সন্ত্রাসীরা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

No comments

Powered by Blogger.