মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেট-আয়োজনে প্রস্তুত বাংলাদেশ by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

তুলনায় বারবার সাত মাস আগের আইসিসি বিশ্বকাপের কথা এসে যেতে পারে। মনে পড়ে যেতে পারে, টিকিটের জন্য আটচলি্লশ ঘণ্টা আগে থেকে ব্যাংকের সামনে লাইনে দাঁড়ানোর কথা। তাই আগেই বলে রাখা ভালো, আজ বাদে কাল মিরপুরে দশ দলকে নিয়ে যে আসর শুরু হচ্ছে সেটা মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই, যেখানে খেলা দেখার জন্য টিকিট কাটার দরকার নেই, সময় করে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে গেলেই পাস দিয়ে দেওয়া হবে। অর্থ নয়, সমর্থকদের ইচ্ছা আর উপস্থিতিই আশা করছে বিসিবি। 'এটা বিশ্বকাপ নয়, মহিলা বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। বিশ্বকাপের মতো জমকালো আয়োজন হয়তো আমরা করতে পারব না।
তবে আইসিসি বাংলাদেশকে এ আসর আয়োজনের যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।' গতকাল দেশের মহিলা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য এ আসরের ম্যাচগুলো দেখতে আসার আহ্বান জানান বিসিবি সভাপতি আ হ ম
মোস্তফা কামাল। রঙ আর শৈলীতে ছেলেদের বিশ্বকাপ আসরের মতো না হলেও গুরুত্বের বিবেচনায় নেহায়েত কম ওজনদার নয় এ আসর। যেখানে সেরা চারটি দলের মধ্যে থাকতে পারলেই ২০১৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য মহিলা বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পাবে বাংলাদেশ। সেরা দুইয়ের মধ্যে থাকতে পারলে ২০১২ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিতব্য টি২০ বিশ্বকাপেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন সালমারা। আর সেরা ছয়ের মধ্যে থাকতে পারলে বাংলাদেশও মহিলা ক্রিকেটে ওয়ানডে মর্যাদা আদায় করে নিতে পারবে আইসিসির কাছ থেকে।
এত কিছু পেতে হলে গ্রুপ পর্বে অন্তত দুটি ম্যাচ জিততেই হবে ঘরের মেয়েদের। কাজটি কিন্তু মোটেই সহজ নয়। কেননা গ্রুপ 'বি'-তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড আর জাপান। এদের মধ্যে পাকিস্তানকে এশিয়ান গেমসে একবার হারানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশি মেয়েরা; কিন্তু ওই গেমসের ফাইনালেই আবার পাকিস্তানের কাছে হারতে হয়েছে। সোমবার আসরের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের মেয়েরা মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের। 'পাকিস্তান অবশ্যই শক্তিশালী দল; কিন্তু তাদের একবার হারানোর অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। চেষ্টা করব আরও একবার হারাতে।' হারানোটা যে কঠিন, সেটা মেনেই বাংলাদেশ অধিনায়ক সালমা খাতুন আত্মবিশ্বাসী তার দল নিয়ে। কোচ মমতা মাবেনও মনে করেন কাজটি কঠিন, কিন্তু অসম্ভব না। 'বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনও শিশু। তবে আমরা শিখছি। মেয়েরা যদি তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সাহস নিয়ে খেলতে পারে, তাহলে এ আসরে ভালো করা সম্ভব।' কোচ জানালেন গ্রুপের জাপান আর আয়ারল্যান্ড তাদের জন্য কিছুটা সহজ হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যথেষ্ট শক্তিশালী। আসরের অন্য গ্রুপে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়ে।
ঢাকা এবং এর আশপাশের চারটি ভেন্যু নিয়ে এ আসর শুরু হতে যাচ্ছে। মিরপুর ছাড়াও ফতুল্লা এবং বিকেএসপির দুটি মাঠে খেলা হবে। আসরের মিরপুরের ম্যাচগুলো স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলা সম্প্রচার করতে পারে। তবে এখনও এ ব্যাপারটি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, কথা চলছে বিটিভির সঙ্গেও। ফেব্রুয়ারি-মার্চে সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে বলে আইসিসি বাংলাদেশকে মহিলাদের এ আসর আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছে। তবে বিশ্বকাপের মতো অর্থ তারা বিসিবিকে দেয়নি। ৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে। 'এ আসরটি আমাদের জন্য মর্যাদাজনক। কেননা বিশ্বকাপের সময় আইসিসি আমাদের সমর্থকদের আগ্রহ দেখে খুশি হয়েছে। তাই তারা বিসিবিকে অনুরোধ করেছে, যেন মহিলা বিশ্বকাপের আসরেও গ্যালারি ভরা থাকে। আমরা তাই বিশ্বকাপের মতো এ আসরেও সমর্থকদের উপস্থিতি আশা করছি। এ আসরে আমাদের আর্থিক কোনো লাভ নেই, তবে এখানে আমরা ভালো করতে পারলে ভবিষ্যতে আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপের মূল আসরই বাংলাদেশে আয়োজন করবে।' আইসিসি থেকে এমন আশ্বাস পেয়েই বিসিবি সভাপতি এ আসরকে লগি্ন হিসেবে ধরে রেখেছেন।
বিশ্বকাপের মতো জমকালো উদ্বোধন না হলেও আজ রাজধানীর একটি বেসরকারি হোটেলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সে সঙ্গে একটা রোড শোও আয়োজন করার কথা রয়েছে বিসিবির। 'ছেলেদের মতো অধিকসংখ্যক ক্রিকেটার নেই মহিলা ক্রিকেটে; কিন্তু আমাদের এখন বেশিসংখ্যক মহিলা ক্রিকেটার দরকার। মহিলা ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এ আসরের গুরুত্ব অনেক। ভবিষ্যতে ছেলেদের মতো মেয়েদের জন্যও আলাদা একটা ক্রিকেট একাডেমী করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। আগামী বছর থেকে জাতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের বেতনভুক্ত করারও সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে।'
বিসিবি সভাপতির কথাতেই পরিষ্কার, দেশের মহিলা ক্রিকেট জনপ্রিয় হলেই কেবল এ আসরটি সার্থক হবে বাংলাদেশের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.