চারদিনেও হত্যার মোটিভ মেলেনি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চার দিন পরও লক্ষ্যহীন পথে এগোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট রাজশাহী মহানগর পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তদন্তের মোটিভ উদ্ধার ও হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে এখনও দিকভ্রান্ত। কারা কি কারণে ড. লিলনকে হত্যা করতে পারে- এমন প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই পুলিশের কাছে। তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলছেন, জড়িত সন্দেহে যাদের গ্রেফতার ও আটক করা হয়েছে তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ পাওয়া যাবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, হত্যাকারীদের শনাক্তে ও এর মোটিভ উদ্ধারে শুধু পুলিশই নয়, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা একযোগে কাজ করছে। তদন্ত কর্মকর্তা আশা করছেন, শিগগিরই ড. লিলন হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধারসহ হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ড. লিলন হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর এমন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১১ জনকে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হলেও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। চার দিনেও সুনির্দিষ্ট কোনো একটি লক্ষ্যের দিকে তদন্ত এগোতে পারেনি।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, যদিও চারটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে- তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তা খুব স্পষ্ট নয়। ড. লিলনের তিনটি বিয়ে নিয়ে যে কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে সেটি হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ নয় বলে তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন ড. লিলনের প্রথম স্ত্রী জলি অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করলেও ওই পরিবারের সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত লিলনের যোগাযোগ ভালো ছিল। জলি ছিলেন লিলনের আপন খালাত বোন।
দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলির সঙ্গে কয়েক বছর আগে ছাড়াছাড়ি হলেও শিউলির সঙ্গে লিলনের পরিবারের অনেকের যোগাযোগ ও খোঁজখবর আদান-প্রদান হয় এখনও। সর্বশেষ স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে সামাজিকভাবে বিচ্ছেদ হয়। তবে স্বপ্না আবারও ড. লিলনের কাছে ফিরে আসার চেষ্টা করছিলেন সম্প্রতি। লিলনের বোনের স্বামী রফিকুল বারী মুকুল যুগান্তরকে বলেন, আমরা কোনোভাবেই মনে করি না পারিবারিক বা দাম্পত্য কারণে তিনি খুন হয়েছেন। কারণ বিচ্ছেদ হওয়ায় দুই স্ত্রীর সঙ্গে এখন তার কোনো বিরোধ বা তিক্ততা ছিল না।
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য দ্বিতীয় কারণ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও রেষারেষিকে মনে করছেন। বিভাগের বিষয়গুলোও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ২০১০ সালে বোরকা পরে ক্লাসে না আসার পরামর্শ দিয়ে কারও কারও ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ড. লিলন। ওই সময় দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি সংবাদের বক্তব্য, উৎস ও কারণ নিয়েও তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। তৃতীয় সম্ভাব্য কারণ হিসেবে জামায়াত-শিবিরের লক্ষ্য ছিলেন কিনা এবং এই কাজে তাদের কারও সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে সমান গুরুত্ব দিয়ে। হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য চতুর্থ কারণ হিসেবে উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ কিনা অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এই কারণকে তদন্ত কর্মকর্তারা সম্ভাব্য বড় কারণ মনে করে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে আরো বলেন, আলামত ও হত্যাকাণ্ডের ধরণ বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে খুনীরা ভাড়ায় কাজ করেছে। খুনীরা তার বাসার আশেপাশেরই লোক।
হত্যাকান্ডের সময় ড. লিলনের বাসা থেকে তালাবদ্ধ একটি মেয়েকে উদ্ধার প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ড. লিলন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মেয়েটির সংশ্লিষ্টতার কোনো কারণ আপাতত দেখছি না আমরা। মেয়েটির সঙ্গে ড. লিলনের বাবা-মেয়ে সম্পর্ক ছিল। মেয়েটিকে ড. লিলন পালিত কন্যার মতো দেখাশোনা করতেন।
তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-বর্জন : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক সমিতির ডাকে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর আগে রোব ও সোমবার কর্মবিরতি পালন করে তারা। এদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। তবে ২০১৪-১৫ সেশনের প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সাত দিনের কালোব্যাজ ধারণ অব্যাহত বয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক সারওয়ার জাহান চৌধুরী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান মজুমদার। এছাড়া অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরাসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বক্তারা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, আগামী ১৩ দিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.