আসন্ন সার্ক সম্মেলনের মূল ফোকাস কানেকটিভিটি

হিমালয়কন্যা নেপাল প্রস্তুত। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার আট জাতির শীর্ষ নেতাদের সার্ক সম্মেলন বসছে। এ সম্মেলনে এ অঞ্চলের দেড়শ’ কোটির বেশি জনগণের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শীর্ষ নেতারা দিকনির্দেশনা দেবেন। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের ফোকাসে রয়েছে কানেকটিভিটি। মোটরযান ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে আছে। সার্ক নেতারা সম্মত হলে এ দুটি চুক্তি আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে সই হবে। আগামী ২২ নভেম্বর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কর্মসূচি কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে সার্কের সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তারপর ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্র সচিবদের সমন্বয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক। ২৫ নভেম্বর সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে ‘কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স’ বৈঠক। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সার্বিক দিক দেখেশুনে চুক্তি দুটি সার্ক নেতাদের সামনে উপস্থাপন করবেন। শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে বরাবরের মতোই শীর্ষ নেতারা ভাষণ দেবেন। সম্মেলনে অবকাশযাপন ছাড়াও থাকবে নেতাদের মধ্যে সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। সার্ক সম্মেলনে সবারই দৃষ্টি থাকবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রতি। তবে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ নজর থাকবে মোদি ও শেখ হাসিনার মধ্যে অনুষ্ঠেয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রতি। বিশ্বের অপরাপর অঞ্চলিক জোটের মধ্যে সার্ক আঞ্চলিক সহযোগিতায় খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। এর মূল কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক। তার মধ্যেও সার্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা সামিটের মধ্য দিয়ে সার্ক যাত্রা শুরু করলেও আঞ্চলিক সহযোগিতা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এবারের শীর্ষ সম্মেলন নানা দিক দিয়ে ঐতিহাসিক। বিশেষ করে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোর এক মতে পৌঁছা বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সার্কের মূল লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন। এ ক্ষেত্রে আরও অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে। তবে এই প্রথম ভারত অনেক বেশি আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি জোর দিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি বিশেষ ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আসন্ন অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, গাড়ি এবং রেল যোগাযোগের জন্য পৃথক দুটি রূপরেখা চুক্তি সই হতে পারে। চুক্তি দুটির আওতায় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাস, ট্রাক এবং ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে যখন এক দেশের মোটরযান অন্য দেশে চলবে তখন সেই দেশকে মাশুল দিতে হবে। চুক্তিতে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন টিকিট চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে মোটরযান ও রেল চুক্তির পাশাপাশি জ্বালানি চুক্তি সইয়ের কথাও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ যান চলাচল এবং রেল চলাচল চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে।
চুক্তিতে যা আছে : চুক্তির আওতায় পণ্য ও যাত্রীবাহী দুই ধরনের যানই চলাচল করবে। পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক ও কনটেইনারবাহী ট্রেইলার চলতে পারবে। প্রাথমিকভাবে ট্রাক বা বাসকে ৩০ দিনের জন্য ট্রানজিট দেবে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সমুদ্রবেষ্টিত শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে পণ্য বা যাত্রী পরিবহনে এ চুক্তির আওতায় ট্রানজিট নেয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত সড়কপথে গিয়ে পরে জাহাজ বা ফেরিতে ওই দেশে যেতে হবে।
তবে সব পরিবহনে পণ্য বা যাত্রী আনা-নেয়া করা যাবে না। পণ্য বা যাত্রী পরিবহনে আলাদা ট্রাক বা বাস থাকবে এবং যে দেশে ট্রানজিট নেয়া হবে, সে দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। আর যে দেশ ট্রানজিট নেবে, সেই দেশ গাড়ির তালিকা তৈরি করবে। প্রতিবছর এ তালিকা হালনাগাদ করা যাবে। অনুমোদন নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেও ট্রানজিট নিতে পারবেন যেকোনো সার্ক নাগরিক।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ নভেম্বর সার্ক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশে নেপালে যাবেন। তিনি ২৭ নভেম্বর দেশে ফিরবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্রগুলো জানায়।

No comments

Powered by Blogger.