বিআরটিসি’র ৫০ ভলভো, চলছে ১টি

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)’র জন্য কেনা দামি ৫০টি ভলভো বাসের মধ্যে বর্তমানে ৪৯টি অচল আছে। মাত্র একটি ভলভো বাস সচল রয়েছে। আর চীন থেকে আমদানিকৃত ২৪৫টি সিএনজি বাসের মধ্যে ১২১টিই অচল হয়ে পড়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে এ তথ্য জানান। সরকারি দলের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, বর্তমানে বিআরটিসি’র বাস বহরে বিভিন্ন মডেলের ১৫২৯টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ১০৫০টি সচল রয়েছে। আর ৪৭৯টি বাস অচল হয়ে গেছে। তবে ৪৭৯টি অচল বাসের মধ্যে ১৮২টি মেরামত অযোগ্য।
জাতীয় পার্টির  একেএম মাইদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সড়ক সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যান চলাচলের জন্য সারা বছরই সড়ক সংস্কারের কাজ করা হয়। তবে বর্ষা মওসুমে সড়কের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় বলে ওই সময় সংস্কারের কাজ বেশি হয়। তিনি জানান, বর্তমানে দূর পাল্লার বিভিন্ন রুটে ২৬৭টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে।
অবৈধ যানবাহনের তথ্য নেই: ঢাকা মহানগরীতে বৈধ যানবাহনের পরিসংখ্যান থাকলেও কতগুলো অবৈধ যানবাহন চলাচল করে তার পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অধিদপ্তর (বিআরটিএ)-এ। তবে অবৈধ যানবাহন যাতে ঢাকা শহরে চলাচল করতে না পারে সে জন্য নিয়মিতভাবেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আর দিনক্ষণ ঠিক করে নয়, যেকোন সময় দেশের যে কোন স্থানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩০৪টি যানবাহন চলাচল করছে। এরমধ্যে ২১ হাজার ৬১৬টি বাস, মিনিবাস ৯ হাজার ৯০৪টি, প্রাইভেটকার ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৩টি, মোটরসাইকেল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৬টি। এছাড়া, অন্যান্য যানবাহন রয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫টি।
বেশি প্রাইভেট কার: ঢাকা মহানগরীতে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩০৪টি। এর মধ্যে বাস ২১ হাজার ৬১৬টি, মিনিবাস ৯ হাজার ৯০৪টি, মোটরকার দুই লাখ ৩ হাজার ৩৩টি, মোটরসাইকেল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৬টি এবং অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা দুই লাখ ৮৭ হাজার ৫টি। আর সংখ্যার হিসেবে রাজধানীর রাস্তার বাসের চেয়ে মোটরকারের সংখ্যা প্রায় ৯ গুণেরও অধিক (৯ দশমিক ৩৯ গুণ) এবং মোট বাস ও মিনিবাসের সংখ্যার চেয়েও ৬ গুণের অধিক (৬ দশমিক ৪৪ গুণ)।
সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে: জাতীয় পার্টির সদস্য মাহজাবিন মোরশেদের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী সংসদে বলেন, গত সাত দিনে বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মোট ৬৫০১টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ৩৬ জনকে। ফিটনেস না থাকায় মোট ১১৭টি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একারণে গত সাত দিনে সড়ক দুর্ঘটনা যথেষ্ট কমেছে। অভিযান পরিচালনার ফলে এক সপ্তাহে দুর্ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১৩টি। যেখানে প্রতিদিনই ঘটতো ১৩টি করে। দুর্ঘটনা না কমা পর্যন্ত এমন সারপ্রাইজ অভিযান চলতে থাকবে। এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা শুধু সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ মন্ত্রণালয় দিয়ে সম্ভব নয়। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও প্রয়োজন রয়েছে। আর মানুষের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতাও বেড়ে গেছে। তাই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ধারণা দিতে শিক্ষা পাঠক্রমে তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
আওয়ামী লীগের মো. জিয়াউল হক মৃধার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় মহাসড়কের ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এ জন্য সরকারি অর্থায়নে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে “ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড সেফটি এট ব্লক স্পট ইন ন্যাশনাল হাইওয়ে” শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪০টি ব্ল্যাক স্পটের মধ্যে ৩৩টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকি ৭টি সড়ক পরিবহন রক্ষণাবেক্ষণ সওজ-এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.