ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়-সময় মেনে কবে ট্রেন ছাড়বে?

যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্প্রতি ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে অনেকেই এ উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছিলেন। রেলের সেবার মান যে পর্যায়ে ঠেকেছে তাতে এ খাতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সকলেই অনুভব করেন।
আর এ ক্ষেত্রে টিকিটের স্বল্পমূল্যই যদি প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়, তবে তা বাড়ানোর যুক্তি সমর্থনযোগ্য। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমাধান দিতে পারছে না। গত কয়েক মাসে টিকিটের বাড়তি মূল্য সেবার মানের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো অবদান রাখতে পারেনি। যাত্রীবাহী কোচগুলোর বিশেষ উন্নতি হয়নি, রেলস্টেশনগুলোর চেহারাতেও বাড়তি আয়ের ছাপ পড়েনি। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, সিডিউলের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপর্যয় ঘটেছে। এ নিয়ে সমকালে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় খারাপ। অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সেবা দূরের কথা, বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যবহার করে যথাসময়ে যাত্রা ও গন্তব্যে পেঁৗছানো রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সেবার এ মান দিয়ে যে দ্রুতগতি ও উন্নত সেবার ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস সেবার সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয় তা সকলেই মানেন। বোধগম্য কারণেই রেল পিছিয়ে পড়ছে প্রতিযোগিতায়। গুনছে লোকসান। কিন্তু দৃশ্যমানভাবে রেলের লোকসানের যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া ভার। কেননা, স্টেশনে যাত্রীর অভাব নেই। যাত্রীরা লাইন দিয়ে, তদবির করেও অনেক ক্ষেত্রে টিকিট পান না। অভিযোগ, কালোবাজারে টিকিট বিক্রি হয় বলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। যাত্রীরা ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বিকল্প উপায়ে ভ্রমণ করেন। এ সংকটের পরও প্রচুর যাত্রী প্রতিনিয়ত ট্রেনকে বেছে নেন। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের জন্য ট্রেনের বিকল্প নেই। তবু রেল লোকসানি খাত। দুর্নীতি, অনিয়ম ছাড়া এ লোকসানের আর কোনো বোধগম্য কারণ কী থাকতে পারে? অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে হাজারো তদবির আর অনিয়ম রেলের নিত্যসঙ্গী। ইঞ্জিনের স্বল্পতা আছে, বগি ও কোচের কমতিও আছে। চালক সংকটসহ জনবলের সংকটও আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা স্টেশনে ট্রেন থামাবার জন্য তদবির। টিকিটের তদবিরে সাড়া দিলে প্রভাবশালীদের পছন্দের স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেওয়ার বিকল্পই-বা কী? কিন্তু এভাবেই কি ট্রেন চলতে থাকবে? যার যেখানে প্রয়োজন সেভাবে ট্রেন থামালে সিডিউল ঠিক রাখা সম্ভব নয়। রেলের সমস্যার অন্ত নেই। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা বোধহয় আন্তরিকতার অভাব। ট্রেন আছে, ইঞ্জিন আছে, চালকও আছে, তবু ট্রেন ছাড়ছে না সামান্য কোনো অজুহাতে_ এমন ঘটনা অহরহ দেখা যায়। আবার মন্ত্রী বা সরকারের চাপ থাকলে যথাসময়ে ট্রেন ছাড়তে কোনো সমস্যাও হয় না, এমন উদাহরণও আমরা পেয়েছি। যে ট্রেনটি একদিন দুই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ল সে ট্রেনটিকে সঠিক সিডিউলে ফেরাতে হলে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক তৎপরতা থাকতে হবে। কিন্তু তেমন তৎপরতার দেখা সহসা মেলে না। ফলে ট্রেন চলছে ঢিমেতালে গতিতে। সিডিউল বিপর্যয় সেখানে বিপর্যয় বলে গণ্য হয় না, বরং এটি স্বাভাবিক একটি ঘটনা। বিপর্যয়কে স্বাভাবিক বলে মানতে থাকলে সমাধান আসা কষ্টকর। সম্পদ ও লোকবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এখনও রেলে উন্নত যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু আরও ইঞ্জিন, আরও লোকবল, আরও কোচের অপেক্ষা তাৎক্ষণিক অজুহাত হিসেবে কাজ দিলেও সব সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। সেবার মান বাড়াতে হলে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষগুলোর সচেতনতা দরকার এখনই।

No comments

Powered by Blogger.