অসহিষ্ণুতার মূলে রয়েছে নির্বাচন পদ্ধতি by ড. এম মনিরুজ্জামান মিঞা

একটি বিষয় লক্ষ করার মতো, যদিও সম্প্রতি বিরোধীদলীয় নেত্রী একটি মন্তব্য করে ফেলেছেন, যা অনেকটাই ব্যক্তিগত আক্রমণ; কিন্তু তিনি খুবই কম এমন মন্তব্য করে থাকেন। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বারবার, অসংখ্যবার এমন ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনো তা করে যাচ্ছেন।


তো, এই যে দুটি দল এবং তার নেত্রীদের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনীতি আরো বৈরী মনোভাবের দিকে যাচ্ছে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ একটি উদ্যোগ নিতে পারে বটে, কিন্তু মূল জায়গায় হাত না দিলে কোনো কাজ হবে না। সেটা হলো নির্বাচন পদ্ধতি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি করছে বিরোধী দল। এটা ছাড়া কোনোক্রমেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ- এসব দেশের জাতীয় সম্পদ। কিন্তু সর্বত্র দলীয়করণ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, তাঁর কথা প্রণিধানযোগ্য। ১৯৯৬ সালে এই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই আন্দোলন করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে। একটি পত্রিকায় পরিসংখ্যান ছিল, ওই সময় আওয়ামী লীগ ১৭০ দিন হরতাল পালন করেছে। এর মধ্যে ৬০ দিনই ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। দীর্ঘদিন তারা আন্দোলন করেছে। ১৪৯ জন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। সংবিধানে কোনো পরিবর্তন-পরিমার্জন আনতে হলে এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। তখন কী করা হলো? নতুন নির্বাচন দেওয়া হলো। কিন্তু সে নির্বাচনে যারা যাবে তাদের ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হলো। অবশেষে বেগম জিয়া নির্বাচন বিল পাস করে পদত্যাগ করলেন।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যেত কি না। আমি বলব, আপনি এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে পাবেন না, যাঁকে দিয়ে সরকার বহাল রেখে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চালাবেন। দুঃখের বিষয়, আমাদের সুশীল সমাজ বলতে যাদের বোঝায়, তারাও দুদিকে ভাগ হয়ে আছে। আমাকে ধরা হয় আমি বিএনপির সমর্থক। কথা আংশিক সত্য। কিন্তু আমি বিএনপির কোনো পদ-পদবিতে নেই। থাকি না। আরেকটি বিষয় রইল। সেটি হলো ইভিএম পদ্ধতি। আমি ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে বুয়েটের একজন অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত বিদেশি ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেছেন, এই মেশিন দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে কারচুপি করা সম্ভব। এমনকি ৫০ মিটার দূর থেকেও এ মেশিন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইভিএম পদ্ধতি কিন্তু দিলি্লর আদালত বাতিল করে দিয়েছেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেমন প্রথমে এসেই বলল, তারা ইভিএম মেশিন ব্যবহার করবে না। কিন্তু অতি রহস্যজনকভাবে তারা তাদের সে কথা পাল্টে ফেলল। এর পেছনে কী আছে, তা সবার বোধগম্য। সুতরাং রেষারেষির প্রধান জায়গাটা কিন্তু রাজনৈতিক কিছু সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে যদি পদ্ধতিগুলোর বিষয়ে মতানৈক্য কমিয়ে আনা যায়, তাহলে একের প্রতি অন্যের আক্রমণের মানসিকতাও কমে আসতে বাধ্য।

No comments

Powered by Blogger.