সিরাজগঞ্জে ভাঙন-কার্যকর সমাধান কত দূর?

সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে আবার ভাঙন আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। পলল সমভূমিতে যমুনার মতো বড় নদীর ভাঙন অস্বাভাবিক নয়। আর সিরাজগঞ্জ তো সুদূর অতীত থেকেই, কবির ভাষায়, 'উদ্দাম নদীর আক্রোশের কাছে ক্রমাগত ভাঙনের রেখা।' কিন্তু সোমবার মধ্যরাতের ভাঙন যে আকস্মিকতার সঙ্গে দেখা দিয়েছে, তা রীতিমতো আতঙ্ক জাগানিয়া।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা রোববারেও 'ব্যার্থেমেট্রিক সার্ভে' করে ভাঙনের লক্ষণ পাননি। এটা স্বস্তিকর যে পাউবো, স্থানীয় প্রশাসন, প্রকৌশলী, ঠিকাদার, গ্রামবাসী ও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ভাঙন প্রশমন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যমুনা যে আবারও আকস্মিকভাবে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা জানি, স্বাধীনতার আগ থেকেই সিরাজগঞ্জে ভাঙন ঠেকানোর প্রচেষ্টা চলছে। ভাঙন রোধে সেখানে পরিত্যক্ত রেলওয়ে ওয়াগনও ফেলা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের পর সেখানকার নদীশাসন ও শহর সুরক্ষা ব্যবস্থা আর দশটা জনপদের মতো হতে পারে না। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সিরাজগঞ্জের ভাঙন ঠেকানোই যাচ্ছে না? ১৯৯৭ সালে পাউবোর বিশেষায়িত শাখার তত্ত্বাবধানে কোরীয় কোম্পানি হুন্দাই প্রায় সাড়ে তিনশ' কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করেছিল। তখন কোম্পানিটির পক্ষে বাঁধটি একশ' বছর টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল বলে সংবাদপত্র সূত্রে জানা যাচ্ছে। কিন্তু ২০০৯ সালের জুলাই মাসেই বাঁধটির দুই অংশে ৪০০ ফুট এলাকা ধসে যায়। গত বছর আগস্টেও বাঁধে ধসের ঘটনা ঘটে। তাহলে এত অর্থ খরচ করা হলো কেন? বাঁধটি নির্মাণের সময় বলা হয়েছিল, বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটি দুর্ভেদ্য। যথাযথ নজরদারিও চলছে। তারপরও ভাঙছে কেন? বিদেশি নির্মাতা হলেও ডিজাইনে কি ত্রুটি ছিল? কাজে ত্রুটি ছিল? নিয়মিত সংরক্ষণ কাজ কি হয়নি? বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা জরুরি বলে আমরা মনে করি। গত বছর ভাঙনের সময় যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, তারা কী সুপারিশ করেছে, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে; আরেকবার ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা সে প্রশ্নও করতে চাই। প্রতিবছর বাঁধ পুনর্বাসন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের নামে কোটি কোটি টাকা পানিতে ফেলা হয় বলে স্থানীয়রা যে অভিযোগ করছে, তাও খতিয়ে দেখা হোক। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষায় একটি কার্যকর সমাধান পেতেই হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.