ব্যর্থতার দায় সরকার এড়াতে পারে না-আর হরতাল নয়

পর পর তিন দিন টানা হরতাল পালিত হলো নিখোঁজ বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে। এখনো তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির যে ফলাফল, তার সবগুলোই পাওয়া গেছে। ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত এ ধরনের একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি অবসানের আশা করা কঠিন।


নিখোঁজ নেতাকে খুঁজে বের করার যৌক্তিক দাবি আদায়ে পর পর তিন দিনের এই হরতাল কর্মসূচি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক হয়েছে, সে প্রশ্ন খুবই সংগত। অন্যদিকে সরকার বলছে, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ১৭ এপ্রিল রাতে এই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখনো এর কোনো কূলকিনারা করা যায়নি। এই ব্যর্থতার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
তিন দিনের হরতালে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন। ঘটেছে সহিংসতা, ধ্বংস হয়েছে সম্পদ। অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জনগণকে। এ সময়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে হয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন ও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর পর পর তিন দিনের এই হরতাল যে প্রভাব ফেলেছে, সে ক্ষতি অপূরণীয়। আমাদের মতো দেশ এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির চাপ নিতে কোনোভাবেই সক্ষম নয়। কিন্তু এটাই যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। বিশ্বের সব দেশেই অপরাধ ঘটে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক কিছু ঘটে বলে একজন রাজনৈতিক নেতার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে পুরো দেশকে তিন দিন হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কাছে জিম্মি থাকতে হয়। কারণ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে, তাদের নেতা ইলিয়াস আলীর এই নিখোঁজ বা গুমের ঘটনার সঙ্গে সরকারের লোকজন জড়িত। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব এর রহস্য উদ্ঘাটন করা ও নিখোঁজ বিএনপির নেতাকে উদ্ধার করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। দুঃখজনকভাবে সরকার এখন পর্যন্ত সে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকারের তরফ থেকে সোমবার যে প্রেস নোট দেওয়া হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, সরকার তাঁকে উদ্ধারে অত্যন্ত সুচিন্তিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, জনগণ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলাফল দেখতে চায়। বিরোধী দলের একজন নেতা মাঝরাতে হঠাৎ তাঁর গাড়ির চালকসহ নিখোঁজ হয়ে যাবেন আর এর দিন সাতেক পরও তাঁর কোনো সন্ধান মিলবে না, কিছুই জানা যাবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হবে—এটা আমাদের চাওয়া ও প্রত্যাশা। আমরা আশা করব, সরকার শুধু কথা বা প্রেস নোট নয়, কাজের মধ্য দিয়ে তাদের আন্তরিকতার প্রমাণ রাখবে। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপির প্রতি আহ্বান, দাবি আদায়ে হরতালের মতো জনভোগান্তি ও দেশের অর্থনীতি ধ্বংসকারী কর্মসূচি বাদ দিন। রাজনৈতিক অধিকারের নামে বা দাবি আদায়ের পথ হিসেবে শুধু হরতাল ডাকা কোনো কাজের কথা হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.