উচ্চ বিদ্যাপীঠে নেতৃত্ব বাছাইয়ের সুযোগ থাকবে না কেন?-ছাত্র পরিষদ নির্বাচন

গতকাল দেশের ১৩ হাজার ৫৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদ (স্টুডেন্টস কাউন্সিল) নির্বাচন হওয়ার খবরটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শিশুকাল থেকে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।


২০১০ সালে প্রথম বাছাই করা ১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। গত বছর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪০টি। ছাত্র পরিষদের পরিকল্পনাকারী ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান ভবিষ্যতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র পরিষদ নির্বাচন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো, শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রচর্চা কি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরেই সীমিত থাকবে? বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) পর্যায়ে কি গণতন্ত্র অনুশীলনের প্রয়োজন নেই? সরকারের নীতিনির্ধারকদের এই স্ববিরোধী নীতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যেখানে সামরিক শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে গণতান্ত্রিক আমলে বন্ধ রাখার যুক্তি কী?
সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদ নির্বাচনের পক্ষে যে যুক্তি দেখিয়েছে; মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তা প্রযোজ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন তথা প্রতিনিধি বাছাইয়ের রেওয়াজ চলে আসছে ঔপনিবেশিক আমল থেকে। কিন্তু নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারগুলো শিক্ষার্থীদের এই গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে চলেছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
আমরা মনে করি, গণতন্ত্র হলো অব্যাহত অনুশীলন। সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বস্তরেই হওয়া উচিত। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষাঙ্গনে যে হল দখল, ক্যাম্পাস দখলের মহড়া চলছে, তা-ও অনেকাংশে বন্ধ হবে। ছাত্রসংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে এবং জোর যার মুলুক তার নীতির অবসান ঘটবে।
ছাত্র পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ পাবে, এটি অবশ্যই আনন্দের কথা। কিন্তু সমাজে ও রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে হলে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরেই যে তার নিবিড় অনুশীলন প্রয়োজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

No comments

Powered by Blogger.