চরাচর-লাল ইটের লালকুঠি by সাজ্জাদ কবীর
পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মোড়ে গেলেই চোখে পড়ে লাল ইটের দালান নিয়ে একটা সুন্দর ঘেরা চত্বর। লাল ইটের জন্যই নাম হয়েছে লালকুঠি। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলে বাঁ দিক ঘেঁষে লাল ইটের বাড়ি। সামনে অনেকটা খোলা জায়গা ঘাসে ছাওয়া।
এখনো সীমানার ভেতরে ঢুকলে একটা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নজরে আসে।
লালকুঠি আসলে একটি টাউন হল। এটার নাম দেওয়া হয় নর্থব্রুক হল। ১৮৭২ থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের ভাইসরয় ছিলেন গভর্নর থমাস জর্জ ব্যারিং। তিনি ছিলেন নর্থব্রুকের লর্ড। ১৮৭৪ সালে তিনি ঢাকা সফরে আসেন। তাঁর এই সফর স্মরণীয় করে রাখতে কয়েকজন জমিদার ১০ হাজার টাকা ও নগরের কিছু বিশিষ্ট নাগরিক পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এই টাউন হলটি তৈরি করেন। এটি নির্মিত হয় ১৮৭৯ সালে।
ভবনের ওপরে উঠে পেছন দিকে তাকালেই চোখে পড়ে ছলাৎছল বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদী। যদিও আজকাল নদীর সেই সৌন্দর্য আর দেখা যায় না। দূষণ বুড়িগঙ্গাকে প্রায় নর্দমায় রূপান্তরিত করেছে। তবে এক সময় যে এই ভবনের ওপর থেকে নদীর বুকে পালতোলা নৌকা দেখে মন উদ্বেলিত হতো, সে কথা আজও বোঝা যায়।
১৮৮০ সালে ঢাকার কমিশনার এই হলের উদ্বোধন করেন। নবাব আবদুল গনি তাঁর ব্যক্তিগত বাদক দল নিয়ে আসেন কমিশনার সাহেবের মনোরঞ্জনের জন্য। এই টাউন হলের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন অভয় চন্দ্র দাস।
১৮৮২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি টাউন হলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি লাইব্রেরিও সংযুক্ত হয়। এটার নাম দেওয়া হয় নর্থব্রুক পাবলিক লাইব্রেরি। এটা সমৃদ্ধ হয়েছিল প্রচুর সাহিত্যের গ্রন্থ সংগ্রহের জন্য। সেটাকে সমৃদ্ধ করতে পুরার মহারাজা এক হাজার, বালিয়াদির জমিদার ব্রজেন্দ্র কুমার রায় এক হাজার, রানি স্বর্ণময়ী ৭০০, কালীকৃষ্ণ ৫০০ ও বিশ্বেশ্বরী দেবী ৫০০ টাকা দান করেন। প্রাথমিক অবস্থায় ইংল্যান্ড থেকে সংগৃহীত এক হাজার বই দিয়েই গ্রন্থাগারটি চালু হয় ১৮৮৭ সালে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এই গ্রন্থাগারের অনেক বই ধ্বংস করে। এরপর টাউন হলের দক্ষিণ দিকে একটি ক্লাব হাউস গড়ে ওঠে। নাম দেওয়া হয় জনসন হল।
নর্থব্রুক হলে ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সংবর্ধনা দেন। ১৯৫০ সালে নর্থব্রুক হল টেলিগ্রাম অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তারপর সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজ হিসেবেও কিছুদিন ব্যবহৃত হয়। এখন এটা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি।
এখানে ঢুকলেই মনে হবে, এটি একটি মোগল ও ইউরোপীয় স্থাপনার সংমিশ্রণে তৈরি ভবন। এটি আসলে তৈরি করা হয় দুই ধরনের আর্কিটেকচার মাথায় রেখে। ছোট ছোট আর্চের জানালা আর কলামে তৈরি ভবনটি আসলেই একটি অনন্য স্থাপনা।
যখন এটি তৈরি হয়, তখন বুড়িগঙ্গার পুরো দৃশ্য এখান থেকে উপভোগ করা যেত। এখন এর চারপাশ ঘিরে এত বাণিজ্যিক ভবন তৈরি হয়েছে যে সেই সৌন্দর্য আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বুড়িগঙ্গাকে দেখতে গেলে দোতলা-তিনতলায় উঠতে হয়।
তার পরও কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে নর্থব্রুক হল বা লালকুঠি।
সাজ্জাদ কবীর
লালকুঠি আসলে একটি টাউন হল। এটার নাম দেওয়া হয় নর্থব্রুক হল। ১৮৭২ থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের ভাইসরয় ছিলেন গভর্নর থমাস জর্জ ব্যারিং। তিনি ছিলেন নর্থব্রুকের লর্ড। ১৮৭৪ সালে তিনি ঢাকা সফরে আসেন। তাঁর এই সফর স্মরণীয় করে রাখতে কয়েকজন জমিদার ১০ হাজার টাকা ও নগরের কিছু বিশিষ্ট নাগরিক পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এই টাউন হলটি তৈরি করেন। এটি নির্মিত হয় ১৮৭৯ সালে।
ভবনের ওপরে উঠে পেছন দিকে তাকালেই চোখে পড়ে ছলাৎছল বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদী। যদিও আজকাল নদীর সেই সৌন্দর্য আর দেখা যায় না। দূষণ বুড়িগঙ্গাকে প্রায় নর্দমায় রূপান্তরিত করেছে। তবে এক সময় যে এই ভবনের ওপর থেকে নদীর বুকে পালতোলা নৌকা দেখে মন উদ্বেলিত হতো, সে কথা আজও বোঝা যায়।
১৮৮০ সালে ঢাকার কমিশনার এই হলের উদ্বোধন করেন। নবাব আবদুল গনি তাঁর ব্যক্তিগত বাদক দল নিয়ে আসেন কমিশনার সাহেবের মনোরঞ্জনের জন্য। এই টাউন হলের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন অভয় চন্দ্র দাস।
১৮৮২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি টাউন হলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি লাইব্রেরিও সংযুক্ত হয়। এটার নাম দেওয়া হয় নর্থব্রুক পাবলিক লাইব্রেরি। এটা সমৃদ্ধ হয়েছিল প্রচুর সাহিত্যের গ্রন্থ সংগ্রহের জন্য। সেটাকে সমৃদ্ধ করতে পুরার মহারাজা এক হাজার, বালিয়াদির জমিদার ব্রজেন্দ্র কুমার রায় এক হাজার, রানি স্বর্ণময়ী ৭০০, কালীকৃষ্ণ ৫০০ ও বিশ্বেশ্বরী দেবী ৫০০ টাকা দান করেন। প্রাথমিক অবস্থায় ইংল্যান্ড থেকে সংগৃহীত এক হাজার বই দিয়েই গ্রন্থাগারটি চালু হয় ১৮৮৭ সালে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এই গ্রন্থাগারের অনেক বই ধ্বংস করে। এরপর টাউন হলের দক্ষিণ দিকে একটি ক্লাব হাউস গড়ে ওঠে। নাম দেওয়া হয় জনসন হল।
নর্থব্রুক হলে ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৬ সালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সংবর্ধনা দেন। ১৯৫০ সালে নর্থব্রুক হল টেলিগ্রাম অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তারপর সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজ হিসেবেও কিছুদিন ব্যবহৃত হয়। এখন এটা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি।
এখানে ঢুকলেই মনে হবে, এটি একটি মোগল ও ইউরোপীয় স্থাপনার সংমিশ্রণে তৈরি ভবন। এটি আসলে তৈরি করা হয় দুই ধরনের আর্কিটেকচার মাথায় রেখে। ছোট ছোট আর্চের জানালা আর কলামে তৈরি ভবনটি আসলেই একটি অনন্য স্থাপনা।
যখন এটি তৈরি হয়, তখন বুড়িগঙ্গার পুরো দৃশ্য এখান থেকে উপভোগ করা যেত। এখন এর চারপাশ ঘিরে এত বাণিজ্যিক ভবন তৈরি হয়েছে যে সেই সৌন্দর্য আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বুড়িগঙ্গাকে দেখতে গেলে দোতলা-তিনতলায় উঠতে হয়।
তার পরও কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে নর্থব্রুক হল বা লালকুঠি।
সাজ্জাদ কবীর
No comments