বাসে গণধর্ষণ-দিল্লিতে ১৪৪ ধারা, বিক্ষোভ দমনে মরিয়া পুলিশ

নয়াদিল্লিতে বাসে ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ দমাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার দিল্লির বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বন্ধ রাখা হয় আটটি পাতাল রেলস্টেশন।
এ ছাড়া রাইসিনা হিলে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি ভবন এবং ১০ জনপথ রোডের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনমুখী সব রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ইন্ডিয়া গেটসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পরে বিক্ষোভের ব্যাপকতার মুখে ইন্ডিয়াগেট থেকে পুলিশ ১৪৪ ধারা তুলে নেয়। তবে তাদের হটাতে পুলিশের শক্তিপ্রয়োগের চেষ্টাও অব্যাহত ছিল।
এদিকে নির্যাতিত ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির সফদারজং হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ওই ছাত্রী এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। গত শনিবার তিনি পুলিশের কাছে প্রথম জবানবন্দি দেন। গত সপ্তাহে চলন্ত বাসে ছয় মদ্যপের হাতে ধর্ষণের শিকার হন ফিজিওথেরাপির ২৩ বছরের এই ছাত্রী। তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে পেটায়। পরে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার পর দিন থেকেই দোষীদের শাস্তি এবং পথঘাটে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লিসহ পুরো ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় গতকালও দিল্লিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। যন্তরমন্তর ও রামলীলা ময়দানে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে নয়াদিল্লি ডিস্ট্রিক্টের অন্যত্র ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। এই ধারায় চারজনের বেশি মানুষের একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ আটটি পাতাল রেলস্টেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরও গতকাল সকালে ইন্ডিয়াগেটের সামনে মূলত শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ করার চেষ্টা করে। পুলিশ লাঠিচার্জ-কাঁদানে গ্যাস-জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভের ব্যাপকতা দেখে সেখান থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।
ভারতে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিক্ষোভকারীরা এই শাস্তি পাল্টে দোষীদের ফাঁসির দাবি তোলে। সমাজকর্মী ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারেও গতকাল বিক্ষোভকারীদের এই দাবিকে সমর্থন করেছেন।
কয়েকজন বিক্ষোভকারী গতকাল ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও দলের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সোনিয়া বলেন, 'আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। এ ঘটনার বিচার হবেই।' ধর্ষকের শাস্তির বিধান প্রসঙ্গে তিনি জানান, আইন পরিবর্তনের জন্য তাদের কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। প্রায় ৯০ মিনিট ধরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর পরই সোনিয়ার বাড়ির সামনে থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে জানান, যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার ব্যাপারে কেন্দ্র ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। এ নিয়ে ফৌজদারি দণ্ডবিধি পরিবর্তনে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইম্ফলে সাংবাদিক নিহত : মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে গতকাল পুলিশের গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছে। এক চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর ওপর যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে এ ঘটনা ঘটে। ৩৬ বছর বয়সী ওই সাংবাদিক সরকারি টিভি চ্যানেল দূরদর্শনে কাজ করতেন। সূত্র : এএফপি, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.