আখাউড়া সীমান্তে উত্তেজনা!-সাতক্ষীরা সীমান্তে তিনজনকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গতকাল শনিবার ভোরে তিন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারি সীমান্তের বিপরীতে ভারতের গোবরদাহ এলাকায় বিএসএফের দুই সদস্যকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগে তাঁদের ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।


এদিকে গতকাল আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তের শূন্য রেখায় খালের দুই পাড়ে আবারও অবৈধভাবে কালভার্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যে পিলার তৈরির কাজ শুরু করে বিএসএফ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এতে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
বিজিবি সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সীমান্তের ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দুই দফা পতাকা বৈঠক হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএসএফের সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগ ও বাংলাদেশিদের আটকের বিষয়ে ভারতের গোবরদাহ এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গতকাল দুপুরে কোম্পানি পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চোরকারবারিদের হামলায় তাদের দুই সদস্য আহত হয়েছে। ওই হামলার সঙ্গে বাংলাদেশিরা জড়িত। বিএসএফ বলেছে, দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ছাড়া আটক বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। সাতক্ষীরা সদরের কালিয়ানি এলাকার জিরো পয়েন্টে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে।
ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া সাতক্ষীরা ৩৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু বাসির বলেন, বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতীয়রা গরু বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত দিয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশিরা হামলা চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, বৈঠকে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হলে বিএসএফ বলেছে, আটক ব্যক্তিদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী দ্রুত তাদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বিজিবি সূত্র জানায়, বিএসএফ যাঁদের ধরে নিয়ে গেছে তাঁরা হলেন: আবদুল খালেক (৫৫), শাহীন হোসেন (২০) ও আবদুল আজিজ (৩৫)। তাঁদের সবার বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায়।
এদিকে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিএসএফ আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকার ২০২৩/৬ এস সীমান্ত পিলার থেকে ২০২৩/৫ এস সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি খালের দুই পাড়ে কালভার্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যে দুটি পিলার তৈরির চেষ্টা করে। অবৈধভাবে সীমান্ত পিলার ঘেঁষে ওই কাজটি করা হচ্ছিল। বিজিবির বাধার মুখে সেদিন তারা চলে যায়। গতকাল দুপুরে বিএসএফ আবারও খননযন্ত্র দিয়ে খালের পাড়ে মাটি খোঁড়া শুরু করে। বিজিবি এতে বাধা দিলে বিএসএফ কালভার্টটিকে রিটেইনিং ওয়াল (মাটি ধরে রাখার দেয়াল) ও তার ওপর এক তারের বেড়া দেওয়ার জন্য আগে যে অনুমতি রয়েছে, তারই অংশ বলে চালিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু বিজিবির পক্ষে বলা হয়, আগের অনুমতিতে কালভার্টের বিষয়টি উল্লেখ নেই, তাই এই বিষয়ে নতুন করে অনুমতি নিতে হবে। বিজিবির এই বক্তব্যে বিএসএফ আগরতলা স্থলবন্দর ক্যাম্প কমান্ডার এ কে মিসরাহ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
বিজিবি সূত্র জানায়, একপর্যায়ে বিএসএফ সীমান্তে লোকবল বাড়াতে থাকে। এতে উত্তেজনা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে যায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি। বিজিবির পক্ষেও লোকবল বাড়ানো হলে বিএসএফ খননযন্ত্র সরিয়ে নেয়।
এই পরিস্থিতিতে বিকেলে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে আগরতলা স্থলবন্দর বিএসএফ ক্যাম্পে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে ১২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর একরাম সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফকে ওই কালভার্টের নকশা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে কী করা হবে, তাও জানাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, কাল সোমবার এ বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মনোনীত ব্যক্তি পর্যায়ে বৈঠক হবে।
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বেলা দুইটার পর থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বন্দরে রপ্তানি পণ্যবোঝাই শতাধিক ট্রাক আটকে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.