পাকিস্তান যেন ফিনিক্স পাখি

এই ১৮ দিনের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষলগ্নে পৌঁছে গেছে। আজকেই জানা যাবে কোন দল সেরা। সেমিফাইনাল পর্যন্ত দুর্ধর্ষ ক্রিকেট হয়েছে। একদম নাগরদোলায় চড়ার মতো। এই আকাশে উঠছি তো পরের মুহূর্তে বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে আছড়ে পড়ছি!‌ ধাক্কাগুলো ভারত–পাকিস্তানকে এগোতে সাহায্য করেছে। এবং দ্বিধাহীনভাবে বলব যে বাকি ৬টা দলের আপসোসের কারণ নেই। কারণ, টুর্নামেন্টের দুটো সেরা দল ফাইনালে খেলছে।
এবার গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি এই টুর্নামেন্টে কী কী দেখলাম।
১.‌ বৃষ্টি পেয়েছি। তাতে পিচে প্রভাব পড়েনি। ভালো পিচ। সবই ৩০০ রানের পিচ ছিল।
২.‌ ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম দিকে হাতে উইকেট রাখো যাতে পরেরদিকে ফোর্স করা যায়। মিডল ওভার ফয়সালা করবে ম্যাচের হার–জিত।
৩.‌ আদর্শ কন্ডিশন পেয়েও বল তেমন সুইং করেনি। আশঙ্কা হয় তবে কি সুইং বোলাররা বিরল প্রজাতির হয়ে গেল?‌
৪.‌ ক্রিকেট কল্পনাতীতভাবেই পাল্টেছে। তবে ইয়র্কার এখনও শ্রেষ্ঠ বল রান আটকানোর জন্য। উইকেটও পাওয়া যায়।
৫.‌ অ্যাকশনে কোনো বদল না করে স্লোয়ার বল করা। ইয়র্কারের পরে শ্রেষ্ঠ বল। একটা মারমুখী ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য।
৬.‌ ডট বল কী করে কমানো যায়?‌ ভাল বলে সিঙ্গল নিয়ে। স্ট্রাইক রোটেট করার জন্য আদর্শ শট। এটা করে কী করে?‌ এটাকে ডিফেন্সিভ শট না বলে লেট ডিফেন্সিভ শট বলা ভাল। বলটাকে সামনে পায়ের কাছে না খেলে একটু দেরিতে খেলা। বলটা থার্ড ম্যানের দিকে যায়। একটা সিঙ্গল হয়। অথচও ঝুঁকিও নিতে হয় না। বোলার সবচেয়ে বেশি রেগে যায় যখন একটা ভাল বলে রান হয়। এবং ছন্দ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
৭.‌ একদিনের ক্রিকেটে, টেস্ট ক্রিকেটের মতো গুড লেংথে চলবে না। মার খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। বরং ব্যাক অফ দ্য লেংথই এখানে গুড লেংথ। এইগুলো সব দলই জানে। প্ল্যান বড় ব্যাপার নয়। সেটা কার্যকরী করতে পারলাম কি না সেটাই আসল। নেটে করা এক জিনিস। আর ম্যাচে চাপের মুখে করা আরেক জিনিস। সেটাই ফারাক করে দেয় হারা আর জেতার। ‘‌ফিনিক্স’‌ পাখির নাম শুনেছেন?‌ এক পৌরাণিক পাখি। যে কি না নিজের ভস্ম থেকে জেগে উঠতে পারে!‌ পাকিস্তানও ঠিক তাই করেছে। নতুন রূপে জেগেছে। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্রীভাবে হারার পর। দেখে মনে হচ্ছে অন্য এগারোজন প্লেয়ার খেলছে। শুধু ইংল্যান্ডকে হারানো নয়। যে দাপটে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে কে বলবে যে ইংল্যান্ড এই টুর্নামেন্টের এক নম্বর ফেবারিট ছিল?‌ দেখলাম পাকিস্তান দলের শরীরী ভাষাই বদলে গেছে। মাঠে ক্রিকেটারদের হাঁটাচলায় আত্মবিশ্বাস চোখে পড়ছে। জিততেই নেমেছি মনোভাব। ওরা করে দেখালও তো। এই একটা দেশ আমাকে অবাক করে। সারাক্ষণ গন্ডগোল লেগে আছে। নিজেরা কিছুই প্রায় তৈরি করতে পারে না। অথচ তারাই এত ফার্স্ট বোলার কী করে তৈরি করে?‌ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এক নম্বর ফার্স্ট বোলার বাইরে ছিল। রুমান রাইস এসে মোহাম্মদ আমিরের অভাব বুঝতে দিল না। হতবাক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। মোহাম্মদ আমির আর রুমান রাইস ছাড়া জুনেইদ খান আর হাসান আলি আছে ফার্স্ট বোলার হিসেবে। হাসান আলি তো দারুণ ফর্মে। এরা মিডল ওভারে মানে ১৫ থেকে ৪০ ওভারে ভয়ঙ্কর। এ তো হল পাকিস্তানের আসল শক্তি। ভারত ৫০ ওভারের মধ্যে যদি ওই ২৫ ওভার নিজেদের অনুকূলে আনতে পারে, তবে জেতার সুযোগ উজ্জ্বল। এদের সঙ্গে আছে পাকিস্তানের তিন স্পিনার। আঠেরো বছরের লেগ স্পিনার শাদাব খান। অফস্পিনার মোহাম্মদ হাফিজ, বাঁ হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম।
ইমাদের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। যেভাবে ওকে ফার্স্ট চেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আসছে অনেকের পছন্দ নয়। আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে ভাবার চেষ্টা করছি। একেবারে উল্টোদিকে দিয়ে। মানে পাকিস্তান এমনটা কেন করছে। এটা আমরা জানি, নতুন বল সুইং করছে না। করলে একটু করছে পুরনো বলে। রিভার্স সুইং। ইমাদকে দিয়ে নতুন বলে বোলিং করিয়ে বলটাকে একটু হলেও পুরনো করে নেয়া। যাতে পরে ফার্স্ট বোলাররা রিভার্স সুইং করতে পারে। আর এজন্যই পাকিস্তানের ফার্স্ট বোলাররা রিভার্স সুইংয়ের সাহায্যে এত মারাত্মক হচ্ছে মিডল অর্ডারে। আগেই বলেছি, এটা আমার অনুমান। এমনটা না–‌ও হতে পারে। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপও বেশ ভারো। আজহার আলি, ফাখার জামান, মহম্মদ হাফিজ, সরফরাজ আহমেদ, শোয়েব মালিক আছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফার্স্ট বোলাররা শট বল করে ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছিল। এই স্ট্র‌্যাটেজি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না–‌ও চলতে পারে। ওরা ভাল পুল মারে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংও করে। ভারতীয় দল সম্পর্কে আগে একদিন লিখেছিলাম। এই দুই দলই ঠিক সময়ে ফর্মের তুঙ্গে উঠেছে। তাই ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করতেই পারি। এবার আসল প্রশ্ন। কে চ্যাম্পিয়ন হবে?‌ আমরা জানি, ৫০ ওভারের ম্যাচে দিন যার, ম্যাচ তার। দু’‌দলেরই বড় বড় বন্দুক আছে। যার বড় বন্দুকগুলো আজ বেশি গর্জাবে, তারাই জিতবে। ‌‌

No comments

Powered by Blogger.