তেরেসা এবার বিদায় হও

লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনগণ কেনসিংটন টাউন হল, হোয়াইট হল, ডাউনিং স্ট্রিটসহ মধ্য লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন। তারা এ ঘটনার জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করছেন। লন্ডনবাসীদের একটাই দাবি, ‘আমরা বিচার চাই।’ এসময় বিক্ষোভকারীরা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসার মে’র পদত্যাগ দাবি করেছেন। খবর দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট ও দ্য গার্ডিয়ানের। বুধবার রাতে পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৭৬ জন। নিহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। সব নিহতের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না বলেও আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুনের ঝুঁকি শনাক্ত করে তেরেসা সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে মনে করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এ অগ্নিকাণ্ডে সরকার ও প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার প্রতিবাদে শুক্রবার লন্ডনবাসীরা কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি টাউন হল ঘিরে ফেলেন। তারা কাউন্সিলরদের কাছে এ ঘটনার জবাব দাবি করেন। ৩৯ বছর বয়সী ক্যারোলিন হিল বলেন, ‘আমরা লন্ডনবাসীরা এ ঘটনা নিয়ে সরকারের একটি স্পষ্ট অবস্থানের জন্য এখানে জড়ো হয়েছি। জনগণকে সুরক্ষা দেয়া কাউন্সিলের দায়িত্ব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় কাউন্সিল মৌলিক মানবাধিকারকে অবহেলা করেছে। লোকজন নিজ ঘরেই নিহত হয়েছেন।’ ‘আমরা বিচার চাই’ স্লোগান দিতে দিতে এক পর্যায়ে শতাধিক বিক্ষোভকারী চেলসি টাউন হলের ভেতর ঢুকে পড়েন। লাইলা নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ মানুষের আশা ভঙ্গ হয়েছে। তারা এখন আর ৯৯৯ থেকে সাহায্যের আশা করেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করা যায় না। তাদের বিশ্বাস করা কোনো মানেই হয় না। আমার বলার ভাষাও নেই।
আমারও সন্তান আছে। আপনি কি কখনও কোনো শিশুকে বহুতল ভবনের জানালা থেকে তার মা-বাবার সঙ্গে মৃত্যু ভয়ে চিৎকার করতে দেখেছেন?’ বিক্ষোভ শুধু কেনসিংটন টাউনেই সীমিত ছিল না। মধ্য লন্ডনে ক্ষুব্ধ জনগণের মিছিল হোয়াইট হল থেকে ডাউনিং স্ট্রিট এবং পরে অক্সফোর্ড স্ট্রিট পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। তারা স্লোগান দেন, ‘বিচার নেই, শান্তি নেই’, ‘আমরা বিচার চাই’। এসময় তারা তেরেসার পদত্যাগ দাবি করেন। এদিকে, নির্বাচনে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে যেতে দেরি করে জনগণের ক্ষোভ বাড়ানোয় দলের ভেতরেও চাপের মধ্যে পড়েন তেরেসা। চাপের মুখে ঘটনার তিন দিন পর তেরেসা কেনসিংটনে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদের মুখে পড়েন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে ‘খুনি’, ‘কাপুরুষ’ আখ্যায়িত করে স্লোগান ওঠে- ‘তেরেসা এবার বিদায় নাও’। বিক্ষুব্ধ জনতার রোষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচিয়ে বের করে নেয় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়। আক্রান্তদের খাবার, আশ্রয় ও জরুরি সাহায্যের জন্য কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি টাউন হল কাউন্সিলে ৫০ লাখ পাউন্ড বরাদ্দ করেছেন তেরেসা। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুনরায় নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যে সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের প্রিয়জনদের তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য। তাদের জন্য আরও কিছু করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রায় ৩০০ প্রতিবাদকারী শুক্রবার কেনসিংটন ও চেলসির টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ দেখায়; তারা অগ্নিকাণ্ডে আশ্রয়হীনদের তাৎক্ষণিক সাহায্যের দাবি তোলে। ডেইলি মেইল জানায়, তেরেসা যেখানে বৈঠক করছিলেন সেই সেইন্ট ক্লেমেন্ট চার্চের বাইরে ডজনের ওপর বিক্ষোভকারীরা ঢোকার চেষ্টা চালায়। পুলিশ এ সময় তাদের বাধা দেয়। চার্চের ভেতরের সদর দরজার পাশাপাশি বাইরে থাকা গাড়িটিও চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের একজন তেরেসাকে চলে যেতে বলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ওই বিক্ষোভকারী বলেন, ‘কী করছেন উনি এখানে? তার উচিত নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে ফিরে যাওয়া।’ তেরেসা এর আগে শুক্রবার সকালে চেলসি অ্যান্ড ওয়েস্টমিনস্টার হাসপাতালে গিয়ে আহতদের পাশাপাশি সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক সময় কাটান।

No comments

Powered by Blogger.