পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়েও সন্তানকে বাঁচাতে পারলেন না মা

দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম সত্ত্বেও শেষমেশ শিশুটিকে বাঁচাতে পারলেন না মা আলেয়া। গত রাতে শিশু জিসানের মামা গিয়াস শিশুটির মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া শালবাগানের ধেপ্পাছড়ির পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপ। একসপ্তাহ আগে যেখানে যানবাহন চলত এখন তা গিরিখাদ। এ গিরিখাদ বেয়ে অসুস্থ সন্তানের জীবন বাঁচাতে শিশুপুত্র জিসানকে কোলে নিয়ে পাহাড়ি পথ হেঁটে ছুটে চলেছেন মা আলেয়া বেগম। গন্তব্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ। সাথে রয়েছে স্বামী বজলুর রহমান আর স্বজন। শিশুর এক হাতে স্যালাইন আর মুখে অক্সিজেন মাস্ক। সিলিন্ডার হাতে শিশুপুত্র নিয়ে ছুটেছেন হন্যে হয়ে। শনিবার বিকেলে এই অবস্থা দেখে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ফায়ার সার্ভিসে কর্মকর্তা সুমিত চাকমা শিশুকে কোলে নিয়ে এবং অন্য সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ধ্বংসস্তূপের বিশাল এই পথ এগিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেল না। গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে লোকনাথ মন্দির এলাকার পেছনে পশ্চিম মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া ও বজলুর বাড়িতে পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়ে। বাড়িতে মাটিচাপা পড়লে মা আর শিশুকে উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে পাঁচদিন চিকিৎসা নেয়ার পর অবস্থার উন্নতি না হলে শিশু জিসানের জীবন বাঁচাতে মা আর বাবাকে ছুটে যেতে হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালের দিকে। গত পাঁচ দিন ধরে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক বিচ্ছিন্ন থাকায় শিশু জিসানের মতো আরো অনেককেই চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম যেতে হয়েছে এভাবেই। রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে নৌপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার সুযোগ থাকলেও বেশি সময় লাগবে এ আশঙ্কায় দুঃসহ কষ্ট সয়েও পাহাড়ি উচুনিচু পথ হেঁটে যাতায়াত করছেন অনেকেই। শুধু রোগী নয় জরুরি প্রয়োজনে মানুষ পানিপথে না গিয়ে বন্দুর পথ পাড়ি দিচ্ছেন। অনেকেই মালামাল নিয়েও যাতায়াত করছেন।

No comments

Powered by Blogger.