পাইলট নিক্সনকে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লাইট চালাচ্ছে বিমান

চাকার পিন না খুলে বিমানের উড্ডয়নের ঘটনার পরও অভিযুক্ত পাইলট নিক্সন বাড়ইকে দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। লাল ফিতা বাঁধা সেফটি পিন না দেখে বিমানের ইঞ্জিন চালু করার নিয়ম নেই। বোয়িং চেকলিস্ট অনুযায়ী ল্যান্ডিং গিয়ারের চাকা থেকে পিন খুলে বিমানের ককপিটে বসে থাকা পাইলটকে দেখাতে হয়। পিনের মাথায় লাল ফিতা বাঁধা থাকে যাতে সহজে পাইলট ককপিটে বসে পিনটি দেখতে পান। অভিযোগ উঠেছে, ২ জুন ব্যাংককগামী বিমানের একটি ফ্লাইটের পাইলট নিক্সন বাড়ই ওই লাল ফিতার ঝাণ্ডা না দেখেই ইঞ্জিন চালু করেন। এ ঘটনায় আকাশে বিমানের চাকা গুটাতে না পেরে পাইলট ৫০ মিনিট তেল পুড়িয়ে ফের জরুরি অবতরণ করে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুরো ঘটনার জন্য ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন পাইলট নিক্সন বাড়ই ও গ্রাউন্ড প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন দায়ী। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিনকে সাধারণ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও পাইলট নিক্সন বাড়ই ও কো-পাইলটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো নিক্সন বাড়ইকে প্রতিদিনই ফ্লাইট দেয়া হচ্ছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের উপদেষ্টা আশিষ রায় চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো ছোটখাটো দুর্ঘটনার পরপরই ম্যানেজমেন্টের প্রথম কাজই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পাইলট ও কো-পাইলটকে গ্রাউন্ডেড (বসিয়ে রাখা) করা। কারণ এই দুই পাইলটকে দিয়ে পরবর্তীকালে কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করানো হলে সেগুলো হবে চরম ঝুঁকিপূর্ণ। শত শত মানুষের জীবনের ঝুঁকি থাকে। ঘটনার পরপরই তাদের সিক (অসুস্থ) ঘোষণা করে বাধ্যতামূলক ছুটি দিতে হবে। মাথায় টেনশন ও দুশ্চিন্তা নিয়ে থাকা কোনো পাইলটকে দিয়ে ফ্লাইট চালানো হলে এতে দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন পাইলট বলেন, চেকলিস্ট অনুযায়ী কোনো পাইলট যদি কোনো কারণে ফ্লাইটের আগের দিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে না পারেন তাহলে ইচ্ছা করলে ওই পাইলট সিক লিভ নিতে পারেন। সেখানে এ ধরনের দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পাইলট কোনোভাবে সুস্থ থাকার কথা নয়। তিনি সার্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকবেন। কাজেই এটা খুবই বিপজ্জনক। একটি সূত্র জানায়, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদ। অভিযোগ উঠেছে, নিক্সন বাড়ই ডিএফওর ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না। বিমানের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ ‘গো স্লো’ (ধীরে চলুন) নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে তারা পাইলটদের গ্রাউন্ডেড করার সাহস পাচ্ছেন না। তবে আজ অফিস খোলার পর এ নিয়ে এমডির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ফ্লাইট অপারেশন ও প্রশাসন শাখার শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকের পরই এ নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ বিষয়ে জানতে ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে জনসংযোগ শাখায় কথা বলার পরামর্শ দেন। এদিকে এ ঘটনার পর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন (অব.) মোসাদ্দিক আহম্মেদের বিদেশে এক মাসের ট্রেনিং নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এয়ারলাইন্স ব্যবসায় বিশ্বে কোনো এয়ারলাইন্সের এমডির এ ধরনের ট্রেনিং করার কোনো রেকর্ড নেই। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এসব ট্রেনিং করে থাকেন। কিন্তু বিমানের এমডি হিসেবে চাকরির বয়স আরও এক বছর বাড়ানোর পরপরই তিনি এক মাসের ট্রেনিংয়ে বিদেশে চলে যাওয়ায় বিমানজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ নিয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের একাধিক বোর্ড মেম্বার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বোর্ড মেম্বার যুগান্তরকে বলেন, বিমানের এমডি হিসেবে মোসাদ্দিক আহম্মেদ গত এক বছর ছিলেন সুপার ফ্লপ। তার পরও তার চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে বোর্ড।

No comments

Powered by Blogger.