কাতারের বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভের’ তালিকা করছে সৌদি আরব

কাতারকে ঘিরে সৌদি ও মিত্রদের যে সব ‘ক্ষোভ’ রয়েছে তার একটা তালিকা তৈরিতে কাজ করছে রিয়াদ। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘ক্ষোভের’ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই উপসাগরীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর কাছে তা উপস্থাপন করা হবে। খবর আল-জাজিরার। লন্ডন সফররত সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, আমি এগুলোকে দাবি বলব না। আমি বলব, এটা কাতারের প্রতি আমাদের ক্ষোভের একটা তালিকা। কাতারকে এগুলোর সমাধান করতে হবে। ‘তবে কাতারের প্রতি কি কি ক্ষোভ রয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেননি তিনি। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণা এমন সময়ে এলো যখন কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্কসহ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কুয়েত এবং আরও কয়েকটি দেশ কাতার সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কাতার সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয়া বন্ধ করছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পশ্চিমা বিশ্বের মনিটরিং ব্যবস্থা প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। লন্ডন সফরে থাকা আমিরাতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ জানান, মিত্র দেশ সৌদি আরব, মিসর এবং বাহরাইন কাতারকে বিশ্বাস করে না। আর এ কারণে দেশটি আসলেই ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ বন্ধে সমঝোতার শর্ত মানছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের ব্যাপারে কূটনৈতিক সমর্থন জোরালো করার প্রচেষ্টায় লন্ডন সফরে যান আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘এটা আচরণগত পরিবর্তনের প্রশ্ন। আমরা যদি কৌশলগতভাবে পরিষ্কার ইঙ্গিত পাই যে, কাতার আচরণে পরিবর্তন আনছে এবং সহিংস জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধ করছে তবে তা আলোচনার ভিত্তি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের একটি পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া প্রয়োজন হবে। আমরা তাদের বিশ্বাস করি না। ওদের প্রতি আমাদের আস্থার মাত্রা একেবারে শূন্য।’ এদিকে কাতার সংকট নিরসনে রিয়াদ সফরে গেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। নজিরবিহীন এ সংকট সমাধানের জন্য শুক্রবার সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর তিনি বলেন, ‘বৈঠক ইতিবাচক ছিল।’ তবে নির্দিষ্ট করে কোনো কিছু বলেননি তিনি। সৌদি পৌঁছার আগে বৃহস্পতিবার কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন কাভুসোগলু।
জাতিসংঘে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ কাতারের : কাতার সংকট সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কাছে অভিযোগ করেছে কাতারের মানবাধিকার কমিটি। কাতারের জাতীয় মানবাধিকার কমিটির (এনএইচআরসি) অভিযোগ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে উপসাগরীয় অবরোধের কারণে কাতারে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এনএইচআরসির প্রধান আলি বিন স্মাইখ আল মাররি। এনএইচআরসি বলছে, কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পর সৌদি নেতৃত্বাধীন অবরোধের প্রথম দশদিনে তাদের কাছে ৭৬৪টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে। কাতারের ওপর সৌদি জোটের অবরোধের ফলে দেশটির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, তার একটি হিসাব বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে তুলে ধরেছে কাতার। এর মধ্য দিয়ে কাতার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অবরোধের ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কাতারের সব খাবার দিতে সক্ষম ইরান : ইরান দাবি করেছে, কাতারের মোট চাহিদার সব খাবার সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে দেশটি। ইরানের সরকারি বাণিজ্য সংস্থার উপপ্রধান আব্বাস মারুফান বলেছেন, কাতারের মতো ১০টি দেশে যুগপৎভাবে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে সক্ষম ইরান। তিনি আরও বলেন, কাতারের কাছ থেকে অনুরোধ পেলে দেশটিতে খাদ্য সরবরাহ শুরু করবে তেহরান। গত সপ্তাহে ইরানি কর্মকর্তারা জানান, ইরান কাতারে খাদ্যভর্তি পাঁচটি কার্গো বিমান পাঠিয়েছে। প্রত্যেকটি বিমানে ছিল ১০০ টন করে খাদ্যদ্রব্য। এছাড়া দেশটি ১৮০ টন ফল ও সবজি নিয়ে একটি জাহাজ কাতারে পাঠিয়েছে। এদিকে কাতারে দুগ্ধজাত পণ্য রফতানির জন্য দোহার সঙ্গে তেহরানের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ইরানি কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, দেশটি কাতারে অন্তত ৪৫ টন দুগ্ধজাত পণ্য রফতানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.