কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন রণতরী

জাপানের উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি রণতরীর সঙ্গে ফিলিপাইনের পতাকাবাহী একটি বাণিজ্য জাহাজের সংঘর্ষে সাত মার্কিন নৌসেনা নিখোঁজ ও অন্তত চারজন আহত হয়েছে। শনিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে টোকিও উপসাগরের দক্ষিণে এবং বন্দরনগরী ইয়োকোসুকা থেকে ১০৪ কিলোমিটার (৫৬ নটিক্যাল মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে এ ঘটনা ঘটে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী। বিবৃতিতে বলা হয়, ইউএসএস ফিটৎজেরাল্ড রণতরীর স্টারবোর্ড সাইডে পানির উপরে ও নিচে উভয় দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর বিবিসি ও দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের। জাপানের কোস্টগার্ড জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন ডেস্ট্রয়ার ফিটৎজেরাল্ডে পানি ঢুকে গেলেও এটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে নেই। অপরদিকে ঘটনার পর পণ্যবাহী বাণিজ্য জাহাজ এসিএক্স ক্রিস্টাল নিজ শক্তিতে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জাহাজে থাকা ২০ জন ফিলিপিনো ক্রুদের কেউ হতাহত হয়নি। উপর থেকে নেয়া ছবিতে মার্কিন ডেস্ট্রয়ারটির স্টারবোর্ডের পাশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হয়েছে। রণতরীটির ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র ও আহত নাবিকদের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ফিটরেজাল্ড নিজ শক্তিতে চলতে পারলেও এর ক্ষমতা ‘সীমাবদ্ধ’ হয়ে পড়েছে বলেও মার্কিন নৌবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে আহত চারজনের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, যুদ্ধজাহাজ থেকে আহত কর্মকর্তাদের কোস্টগার্ডের হেলিকপ্টারে তুলে নেয়া হচ্ছে। আহত চার নৌসেনার মধ্যে মার্কিন ডেস্ট্রয়ারটির কমান্ডিং অফিসার ব্রেইস বেনসনও রয়েছেন। তাদের হেলিকপ্টারে করে ইয়োকোসুকায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেনসনের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী। জাপান কোস্টগার্ড নিখোঁজ নাবিকদের খোঁজে সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছে। জাপানি কোস্টগার্ড জানায়, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার কাজে সহায়তায় তাদের চারটি জাহাজ এবং একটি হেলিকপ্টার কাজ করছে। তাদের ধারণা, নিখোঁজ ব্যক্তিরা সমুদ্রে পড়ে যেতে পারেন। ইয়োকোসুকায় মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের এক মুখপাত্র জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ফিটজেরাল্ড তিন নট গতিতে ইয়োকোসুকার নৌঁঘাটিতে ফিরে আসছে। মার্কিন নৌবাহিনীর অপর একটি যুদ্ধজাহাজ ও দুটি টাগবোট ফিটজেরাল্ডকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে গেছে। দুর্ঘটনার সময় মার্কিন রণতরীটি ১৪.৬ নট (২৭ কিলোমিটার) গতিতে চলছিল। ফিলিপাইনের পতাকাবাহী ২২২ মিটার দৈর্ঘ্যরে এসিএক্স ক্রিসটাল বাণিজ্যিক জাহাজটি জাপানের নাগোয়া শহর থেকে টোকিওতে যাচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ট্রাফিক রেকর্ড বলছে, দুর্ঘটনা ঘটার ২৫ মিনিট আগে হঠাৎ করেই উল্টো দিকে ঘুরে যায় এসিএক্স ক্রিসটাল। কেন হঠাৎ করেই জাহাজটি দিক পরিবর্তন করল সেটি পরিষ্কার নয়। তদন্ত শেষ হলে যে কোনো বৈধ ইস্যু প্রকাশ করা হবে’ বলে জানায় সপ্তম নৌবহরের ওই কর্মকর্তা। জাপানের বৃহত্তম দুটি কন্টেইনার পোর্ট টোকিও ও ইয়োকোহামামুখী জাহাজ চলাচলের কারণে টোকিও উপসাগরে ঢোকার জলপথটি বাণিজ্যিক জাহাজের আনাগোনায় ব্যস্ত থাকে। এই জলপথেই জাহাজ দুটির সংঘর্ষ হয়েছে। প্রকাশিত ছবি থেকে বোঝা গেছে, কন্টেইনারবাহী ৩০ হাজার টনি এসিএক্স ক্রিস্টালের সম্মুখ ভাগের একপাশ ইউএসএস ফিটজেরাল্ডের স্টারবোর্ড পাশে আঘাত করেছে। এতে এসিএক্স ক্রিস্টালের পোর্ট বো অংশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তিনগুণ ওজনের বাণিজ্যিক জাহাজটির আঘাতে মার্কিন ডেস্ট্রয়ারটির বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন-জাপান নৌমহড়া শেষ : জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে দেশটির নৌবাহিনীর বড় ধরনের সামরিক মহড়া শেষ হয়েছে। বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে এ মহড়া চালানো হয়েছে। মহড়ায় মার্কিন পরমাণু শক্তিচালিত রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান এবং জাপানের হেলিকপ্টারবাহী ইজমো শ্রেণীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ অংশ নিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দিনের মহড়ায় জাপানের একটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজও অংশ নিয়েছে। বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে এ মহড়া হয়েছে। চীন এ সাগরের বেশির ভাগ অংশের ওপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে। এছাড়া এ সাগরের ওপর মালিকানা দাবি করছে ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম।

No comments

Powered by Blogger.