খিলক্ষেতবাসী পানিবন্দী

এক সপ্তাহ আগের বৃষ্টির পানিই আটকে আছে রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানসহ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার বিকেলের বৃষ্টি ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে খিলক্ষেতের বেপারীপাড়া, বটতলা, নামাপাড়া, খাঁপাড়া, মধ্যপাড়াসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, খিলক্ষেতের আশপাশের জলাধার ভরাট এবং পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে জলাবদ্ধ হয়ে আছে পুরো এলাকা। রাস্তায় জমে থাকা পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দী অবস্থায় দুর্বিষহ দিন যাপন করতে হচ্ছে খিলক্ষেতবাসীকে। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বরুয়া এলাকায় পুলিশের আবাসন প্রকল্পের জন্য বোয়ালিয়া খাল ভরাটের কারণে খিলক্ষেত এলাকার পানি নামতে পারছে না।  সরেজমিনে দেখা যায়, খিলক্ষেত বাজার, মধ্যপাড়া, বটতলা, বেপারীপাড়া, আমতলাসহ গোটা এলাকার বাসিন্দাদের হাঁটুসমান নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এসব এলাকায় বাসাবাড়ির ভেতরেও জমে আছে ময়লা পানি। বিশেষ করে প্রায় প্রতিটি টিনশেড ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। পচা পানিতেই ঠায় দাঁড়িয়ে চলছে বাসনকোসন ধোয়ামোছা ও রান্নাবাড়ার কাজ। খিলক্ষেত মধ্যপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার দুলাল বলেন, খিলক্ষেত এলাকার পানি নামার তিনটি পথ ছিল। নামাপাড়ায় পুলিশের আবাসন প্রকল্পের পাশের খাল, ৩০০ ফুট রাস্তার পার্শ্ববর্তী খাল ও খিলক্ষেত এলাকার রেললাইনের পাশের নিম্নাঞ্চল। গত কয়েক বছরে ৩০০ ফুটের পাশের জলাধার ভরাট করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলেন, খিলক্ষেত মধ্যপাড়া, নামাপাড়া, বটতলা, বালুর মাঠের বিভিন্ন এলাকার পানিনিষ্কাশন নালাগুলো সংস্কার করা হলেও মূল সড়কের নালার কোনো রকম সংস্কার করা হয়নি। তাই পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। এই নালাগুলো অন্তত জরুরি ভিত্তিতে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় নালাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। দেখা যায়, পানির কারণে খিলক্ষেত মূল সড়কের দুই পাশের দোকানগুলোর অধিকাংশই বন্ধ। খিলক্ষেত সুপার মার্কেটের ভেতরেও পানি। ঈদ সামনে হলেও মার্কেটে ক্রেতা কম। সারা দিন দোকান খোলা রেখেও হাজার দুয়েক টাকা বিক্রি করতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী। খিলক্ষেত বাজারের ইউনুস অপটিক্সের স্বত্বাধিকারী মামুন খান বলেন, দোকানের সামনে পানি, মার্কেটের ভেতরে পানি। গত এক সপ্তাহে কোনো বেচাবিক্রি নেই। তিনি আরও বলেন, দোকানের সামনে এক-দুই ফুট দেয়াল তুলেও পানি ঠেকানো যায় না। অনেক দোকানের মালপত্র নষ্ট হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ঈদের ছুটির নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খিলক্ষেতের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সড়কে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি জমে থাকায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না, অন্যদিকে পানিভর্তি কক্ষেও পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
মধ্যপাড়া এলাকার ইউরোশিয়া স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটির ছয়টি কক্ষের পাঁচটিতেই পানি জমে আছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল অধিকারী বলেন, ঈদের ছুটি তো দেওয়া হয়নি। পানির কারণে বাধ্য হয়েই স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বাসাবাড়িতে ও রাস্তায় পানি জমে থাকায় মশার উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বেপারীপাড়ার বাসিন্দারা। তা ছাড়া, রাস্তায় জমে থাকা হাঁটুসমান নোংরা পানি শরীরে লেগে শিশু ও পরিবারের অন্য সদস্যদের চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে বলে তাঁরা জানান। বেপারীপাড়ার গৃহিণী আকলিমা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে পানিবাহিত রোগগুলো মহামারি আকার ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, বাইরে থেকে এলেই শরীর চুলকাচ্ছে। মনে হয় পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। খিলক্ষেতের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর শাহনাজ পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খিলক্ষেত থেকে বরুয়া এবং বেপারীপাড়া থেকে খাঁপাড়া হয়ে বনরূপা পর্যন্ত রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ২৬ কোটি টাকার বাজেট পাস করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করতে পারব। তখন জলাবদ্ধতা থাকবে না।’ পানিপ্রবাহের পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ১০০ ফুট খাল সংস্কারের সময় অন্য খালগুলোও সংস্কার করা হবে। বর্ষা মৌসুমের আগেই খিলক্ষেতের প্রধান সড়কের সমস্ত ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, বৃষ্টির আগেই ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু যেখান দিয়ে পানি নামবে সেখানের পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। তবু জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় ম্যানহোলের মুখ পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.