জোড়াতালির ঘাটে ঈদযাত্রা!

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের এবারের ঈদযাত্রায় পদ্মা পার হওয়াটা নির্বিঘ্নে হবে কি না, তা নির্ভর করছে প্রকৃতির মর্জির ওপর। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার পরিত্যক্ত ঘাটে জোড়াতালি দিয়ে ঈদের বাড়তি চাপ সামলাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে ভারী বৃষ্টি বা বাতাসসহ বৃষ্টি হলেই ভাঙনে সমস্ত জোড়াতালি ধুয়েমুছে যাওয়ার শঙ্কাটাকেই বড় করে দেখছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। ঘাট তদারকির দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মার দৌলতদিয়া প্রান্তে চারটি ঘাটের মধ্যে দুটি গত বছরই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ঘাট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখনো নতুন ঘাটের সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘাটেই জোড়াতালি দিয়ে এবার ঈদে যানবাহন পারাপার চলবে। তবে ভারী বৃষ্টি বা ভাঙনের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এদিকে পাটুরিয়া প্রান্তের কর্মকর্তারা আশার বাণী শুনিয়ে বলছেন, এবার পাটুরিয়ার চারটি ঘাটই সচল, ফেরিও পর্যাপ্ত। গতকাল শনিবার দুই ঘাটে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ঘাটের পরিস্থিতিকে ভালো বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাসের চাপ ছিল মাঝারি, ট্রাকের চাপ একেবারেই কম। অল্প সময়ের মধ্যেই যানবাহনগুলো পারাপার হচ্ছিল। ঘাটে অপেক্ষমাণ রাজবাড়ীগামী রাবেয়া পরিবহনের চালক মো. সেলিম বলেন, ‘এখন তো ঘাটে অনেক কম সময় লাগছে। আসামাত্রই পার হচ্ছি।’ সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ঘাটের পাশ দিয়ে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘাট এলাকার বেশির ভাগ লোকজন সরে গেছেন, বাকিরাও চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। টিকে আছে শুধু ঘাটটি। যেকোনো সময় এটিও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ৩ নম্বর ঘাটটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।
বিআইডব্লিউটিএর দৌলতদিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, পাটুরিয়া প্রান্তে চারটি ঘাটই সচল রয়েছে। তবে ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়া প্রান্তের চারটি ঘাটের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট গত বছরই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখনই দৌলতদিয়ায় দুটি নতুন ঘাট তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এখন পর্যন্ত দুই ঘাটের সংযোগ সড়ক তৈরি করতে না পারায় এগুলো এই ঈদেও চালু করা যাচ্ছে না। এখন ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট সচল রেখে ঈদের পারাপার করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভাঙন রোধে পাইলিং করা হয়েছে, জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘাটে পানি এখন মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থা বহাল থাকলে ঈদের বাড়তি চাপেও পারাপারে তেমন সমস্যা হবে না। তবে কোনো দুর্যোগ ঘটলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। রাস্তা তৈরির কাজ সওজ অধিদপ্তরের। যোগাযোগ করা হলে সওজ রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদার কাজ করছেন। তাঁর পেছনে কর্মকর্তারা লেগে আছেন, ঠিকাদারকে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। সবাই প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। রাস্তায় বালু ভরাটের কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই অন্য কাজগুলো দ্রুত শেষ হবে। ইট দেখা আছে। রোলার রেডি আছে। সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, কাজ কোনোভাবেই ঈদের আগে শেষ করা সম্ভব নয়। দৌলতদিয়া প্রান্ত শঙ্কায় থাকলেও আরিচা প্রান্তের কর্মকর্তারা বলছেন পরিস্থিতি ভালো। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাটুরিয়ার চারটি ঘাটই পূর্ণমাত্রায় সচল রয়েছে। ঈদে এই চার ঘাটে তাঁদের ১৯টি ফেরি চলাচল করবে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে, তাহলে তেমন একটা ভোগান্তির আশঙ্কা নেই। বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে কর্মরত লোকজন বলেন, সাধারণত ঘাটে ১৩ থেকে ১৫টি ফেরি সেবা দিয়ে যায়। এই ফেরি দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে দুই থেকে সোয়া দুই হাজার যানবাহন পারাপার করা যায়। ঈদের সময় চার ঘাটে ১৯টি ফেরি চলাচল করবে। এর মধ্যে রো রো (বড়) ফেরি ১০টি, ইউটিলিটি ফেরি ৬টি ও কে টাইপ ফেরি রয়েছে ৩টি। কর্মকর্তারা বলেন, এখন পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রায় সাড়ে ৩ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে একটি ফেরির সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। এ অবস্থা বহাল থাকলে ঈদের যানবাহন পারাপারে তেমন একটা সমস্যা হবে না। তবে ভারী বৃষ্টি হলে ঘাট ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বৃষ্টি হলে স্রোতের গতিবেগ বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পারাপারে সময় বেশি লাগবে। পাটুরিয়া ঘাটে কর্মরত মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের চাপ সামলাতে পুলিশের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। সে সময় ঘাটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.