ফ্ল্যাটের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে

আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হলে ফ্ল্যাটের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ কোনো ফ্ল্যাটের দাম বর্তমানে ১ কোটি টাকা হলে ভবিষ্যতে দাম বেড়ে তা ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হতে পারে। এমন আশঙ্কা করছে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। ফ্ল্যাটের দাম যাতে বেড়ে না যায় সে জন্য আবাসন খাতকে নতুন ভ্যাট আইনের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছেন রিহ্যাব নেতারা। তাঁরা বলছেন, নির্মাণ ও আবাসন খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে ফ্ল্যাটের দাম কোনোভাবেই আর নিম্ন মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে না। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল শনিবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন রিহ্যাব নেতারা। এ ছাড়া আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা, ২০ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন, সেকেন্ডারি মার্কেট সৃষ্টির দাবি করেছেন তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন এবং সাংসদ ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, পরিচালক আল আমিন, কামাল মাহমুদ, জহির আহমেদ প্রমুখ। আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, অর্থমন্ত্রী এবার যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নির্মাণ ও আবাসন খাত। বর্তমানে ফ্ল্যাট কেনাবেচায় দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এটি ১৫ শতাংশ হয়ে গেলে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এখন ৫০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাটে ৭৫ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হয়। নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে সেটি সাড়ে সাত লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। তা ছাড়া বাজেটে রড, সিমেন্ট, ইট, পাথর, বালুর ওপরও ভ্যাটসহ অন্যান্য কর আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য নির্মাণ খরচ অনেক বেড়ে যাবে। শেষবিচারে এই বাড়তি খরচ ক্রেতার ঘাড়ে গিয়েই পড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রডের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সব মিলিয়ে রডের দাম টনপ্রতি ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়বে। সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বালুর ওপরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এসব তথ্য উল্লেখ করে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, রড, সিমেন্ট, ইট, পাথর ও বালুর দাম বাড়লে আবাসন খাত ভয়াবহ অবস্থায় পড়বে। প্রতিটি আবাসন প্রকল্পের ব্যয় কমবেশি ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, নির্মাণ ও আবাসন খাতকে ভ্যাট আইনের আওতামুক্ত রাখার দাবিটি কেবল রিহ্যাবের নয়, গণমানুষের। সত্যিই আশ্চর্য হতে হয়, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণমুখী সরকার কিনা মানুষের ওপর এত বেশি কর আরোপ করছে। আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকার। একই সঙ্গে নিরাপত্তার ব্যাপারও। তাই আবাসন খাত নিয়ে ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা করতে হবে। আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ব্যয়ের কারণে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফ্ল্যাট বিক্রির পরিমাণ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় কমাতে গিয়ে লোকবল ছাঁটাই করছে। তাই এই মুহূর্তে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আবাসন খাতে নীতিসহায়তা দিতে হবে। আবাসন খাতে নিঃশর্তভাবে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে আইনের মধ্যে মারপ্যাঁচ রয়েছে। আগে শুধু মালয়েশিয়ায় টাকা পাচার হতো, এখন ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হচ্ছে। বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হলে আয়কর অধ্যাদেশ সংশোধন করতে হবে।’ ঘোষিত বাজেটকে আবাসন খাতবান্ধব নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.