সপ্তাহে এক দিন জমে থাকা পানি ফেলে দিন

শনিবার সকাল ১০টা! পুরান ঢাকার মিটফোর্ড রোডের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার করছিলেন অ্যাপ্রোন পরা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। অনেকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাঁদের দিকে। দুপুর ১২টার দিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়েও একই রকম কর্মসূচি দেখা গেল। শুধু এই দুটি স্থানই নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল এমন দৃশ্য দেখেছে নগরবাসী। সাদা অ্যাপ্রোন পরা তরুণ-তরুণীর দল সবাইকে নিজের বাড়ি এবং বাড়ির চারপাশ মশামুক্ত রেখে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা নিজেরাও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করেছেন। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে গিয়ে তাঁরা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাও দিয়েছেন। কর্মসূচি চলাকালে বাড়ি বাড়ি যাওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা ‘সপ্তাহে এক দিন, জমে থাকা পানি ফেলে দিন’ স্লোগান দিয়ে মানুষকে সচেতন করেন। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে গতকাল ঢাকার পাঁচটি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ২২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, তিনটি নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ ঢাকার ৯২টি ওয়ার্ডের ৭৫০টি স্থানে এমন কর্মসূচি পালিত হয়। চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থী, নার্সসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ২০৫টি দলে বিভক্ত হয়ে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচিতে সহযোগী হিসেবে ছিল জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কর্মসূচি দেখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই কর্মসূচি প্রতীকী। এক দিনে ঢাকা মহানগরীর সব মশা মারা যাবে না। তবে এর ফলে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, যখন কোনো রোগ সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা একা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। জনগণকেও তখন রোগ প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে ঢাকা উত্তরের মহাখালীর জাতীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান-নিপসমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন নিপসমের পরিচালক বায়জীদ খুরশীদ। ঢাকা দক্ষিণে একই রকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম। কর্মসূচি চলাকালে স্বেচ্ছাসেবীরা লোকজনকে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে লোকজনকে ধারণা দেন। এরপর তাঁরা এডিস মশার প্রজননস্থল শনাক্ত, লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানি অপসারণ, ডাবের খোসা ও ক্যান অপসারণ করেন। মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বায়জীদ খুরশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে এই দুই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এ জন্য বাসাবাড়ি ও আশপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, কর্মসূচি চলাকালে ১৪০টি এলাকার ১ হাজার ৪৮০টি বাড়ি থেকে তথ্য নেওয়া হয়। এসব বাড়ি থেকে চিকুনগুনিয়ার ২ হাজার ৯৫৬ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। এ সময় তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। কর্মসূচির সফলতা বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তহমিনা গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের কাছ থেকে আমরা অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। লোকজন আমাদের এই ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেছেন। ৯২টি ওয়ার্ডের এসব কর্মসূচিতে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। আমরা এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।’

No comments

Powered by Blogger.