বিপন্ন হালদা by অলোক কুমার মিস্ত্রী

এশিয়া একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী, যার ঐতিহ্য আজ বিপন্ন। সামনেই বর্ষা মৌসুম। প্রতিবছরের মতো এবারও জেলেরা ভরা পূর্ণিমা, মেঘের গর্জন আর বহুল প্রতীক্ষিত বৃষ্টির জন্য ওত পেতে আছে। কারণ এ সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে এই হালদা নদীতে আসে।


ইদানীং শুরু হয়ে গেছে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের কাজ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়নগরের পাহাড় থেকে সৃষ্ট হয়ে এ শাখা নদীটি পাহাড়-পর্বতবেষ্টিত পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা ফটিকছড়ি উপজেলার সর্বউত্তরের সীমানা বাগানবাজার আন্ধারমানিক দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এটি চট্টগ্রামের রামগর থানার বদনাতলী পাহাড় রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা অতিক্রম করে চট্টগ্রামের কালুরঘাট নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর বাঁকের সঙ্গে মিশে গেছে। এক সময় এটির গভীরতা ছিল বেশ। বর্তমানে এটি হুমকিগ্রস্ত প্রজনন কেন্দ্রও বটে। কারণ, এর যথাযথ নাব্যতার অভাব, এ নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল, কারেন্ট জালের ব্যবহার, বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা ইত্যাদি কারণে আজ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হুমকির সম্মুখীন। মূলত নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার। এর পানির উৎস মানিকছড়ি, ধুরং, বারমাশিয়া, মন্দাকিনী, লেলাং, গোয়ালিয়া, চানখালী, সর্তা, কাকতিয়া, সোনাইখাল, পাড়াখালী, কাটাখালীসহ বেশ কিছু ছোট ছোট ছড়া এবং কর্ণফুলী নদীর জোয়ার। বর্তমানে এর গভীরতা ২৫ থেকে ৫০ ফুট। এ নদী থেকে কার্প জাতীয় ফিস যেমন_ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশসহ নানা মাছের ডিম জেলেরা সরাসরি সংগ্রহ করেন। আনুমানিক প্রায় ৫০ বছর ধরে এ দেশের মৎস্য চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করত এই প্রাকৃতিক হালদার পোনা। হালদার ৪টি বাঁক কেটে ফেলা, পরিকল্পনাবিহীন স্লুইস গেট নির্মাণ, অতিরিক্ত ব্রুড ফিস নিধন, ইঞ্জিনচালিত নৌযান, ওই এলাকায় যথাযথ শিল্প কারখানা গড়ে ওঠা এবং অতিরিক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে প্রাকৃতিক হালদা তার চিরচেনা রূপ অর্থাৎ নাব্যতা হারাতে বসেছে। যার ফলে এ নদীতে মাছের ব্রিডিং হ্রাস পাচ্ছে।
১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী বাড়িঘোনা অংশকে সরকারিভাবে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তখন দেশে মৎস্য অভয়াশ্রম ছিল ৯টি। তবে সরকার হালদার অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২০০৭ সালে 'হালদা পুনরুদ্ধার' নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। বর্তমানে এই হালদা নদী থেকে পুনরায় অভয়াশ্রম হিসেবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার এবং দরকার সরকারে যথাযথ উদ্যোগ। হালদা সংরক্ষণে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা, যারা এর প্রজনন মৌসুম হতে সারা বছর এর নাব্যতা রক্ষায় কাজ করবে। হালদা নদীর নতুন নতুন গতিপথের কারণে পুরনো হালদার পানি ঢুকে তা ভরাট হয়ে যায়। বর্তমানে এর নাব্যতা এতই কম যে, একে মরা নদী বললেও ভুল হবে না। বিপন্ন হালদা রক্ষার্থে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশ ও জাতি পাবে সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। উপকৃত হবে জনগণ ও অর্থনৈতিক দিক হতে লাভবান হবে আমাদের দেশ।
aloke2010@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.