খোলাবাজারের চাল চোরাচালান!

গরিবের মুখের খাবার লোভী কিছু মানুষ গ্রাস করছে। একদিকে পাঁচ কেজি চাল নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে হয়রান হচ্ছে সাধারণ মানুষ; অন্যদিকে তাদের প্রয়োজনীয় সেই চাল-গম চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। বস্তা পরিবর্তন করে সেই চাল-গম বিক্রি করছে দোকানি ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে।


সরকার যেখানে সাধারণ মানুষের কল্যাণে অন্য রকম চিন্তা করছে, পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন একটি অসাধু মহল নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। খোলাবাজারে চাল বিক্রির এই চিত্র দীর্ঘদিনের। পত্রিকান্তরে এসব সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল সংবাদ বেরিয়েছে কালের কণ্ঠে। একমাত্র কারওয়ান বাজারেই তিন হাজার বস্তা চাল ও গম গুদামজাত করেছে সেখানকার কিছু ব্যবসায়ী। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে সেই চাল ও গম উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে ২০০ বস্তা চাল ট্রাক থেকে নামানোর সময়ই উপস্থিত হয় র‌্যাব। টাঙ্গাইল থেকে এই খাদ্যদ্রব্য কারওয়ান বাজারে আনা হচ্ছিল। ১৯ তারিখের পত্রপত্রিকায়ও এ-সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন রয়েছে। সংগত কারণেই মনে করা যায়, এই কালোবাজারি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারের খাদ্য বিভাগের লোকজনও। কারণ খাদ্য বিভাগের লোক ছাড়া এত বেশি পরিমাণ চাল-গম কোনোভাবেই সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রাথমিক অবস্থায় র‌্যাব সেই তথ্যও উদ্ঘাটন করেছে। বাজারে চাল-গমের দাম চড়া থাকার কারণে সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিয়ে গরিব মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে খোলাবাজারে চাল বিক্রি করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এ কার্যক্রম গরিবের জন্য ব্যাপক কল্যাণকর হয়েছে। যেসব গরিব মানুষের পক্ষে ৪০ টাকা কেজি দরে চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না, তারা ট্রাক থেকে ২৪ টাকা দরে চাল কিনে নিজেদের চাহিদা মিটাচ্ছে। রাষ্ট্রের অতিজরুরি বিষয়টিকে এভাবে নষ্ট করে যারা, তাদের যেনতেনভাবে যাতে ছেড়ে না দেওয়া হয় সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। এই মুহূর্তে তিন হাজার বস্তা খাদ্যদ্রব্য ধরা পড়েছে; এর বাইরে যে কি পরিমাণ চাল কালোবাজারে গেছে তার হিসাব জানা সম্ভব নয়।
কালোবাজারি চক্র নিজেদের আখের গোছাতেই এমন কাজ করছে, নাকি এর পেছনে আরো কোনো অশুভ উদ্দেশ্য কাজ করছে, তাও দেখতে হবে। এ ধরনের অমানবিক কাজ করার পেছনে শুধুই আর্থিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্য কাজ করছে বলে মনে হয় না। তদন্তে সেই বিষয়টিও যেন খোঁজা হয়। অন্যদিকে শুধু টাঙ্গাইল কিংবা ঢাকায়ই নয়, ওএমএসের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য যেসব স্থানে দেওয়া হচ্ছে সর্বত্রই যেন নজরদারি বাড়ানো হয়। আর যারা কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থাও যেন করা হয়। সরকারের সুনাম রক্ষার সঙ্গে বিষয়টি সরাসরি যুক্ত বিধায় ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.