সাক্ষ্যে মেজর রওনক-পেছন ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মেজর মোশাররফকে গুলি করে জওয়ানরা

‘আমাকে ও মেজর মোশাররফকে নূর মোহাম্মদ রাইফেল স্কুল থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে জওয়ানরা। তারা মোশাররফকে পেছন ফিরে দাঁড়াতে বলে। তিনি পেছন ফিরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জওয়ানরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।’

পিলখানা হত্যা মামলায় সাক্ষ্যে চিকিৎসক মেজর রওনক আজাদ গতকাল বুধবার আদালতে এ বর্ণনা দেন। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এই নারী কর্মকর্তা কেঁদে ফেলেন। রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
সকাল সাড়ে নয়টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝে দুই দফা বিরতি দিয়ে কার্যক্রম চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এ আদালতের বিচারক জহুরুল হক ছুটিতে থাকায় বিচারক আখতারুজ্জামান বিচারকাজ পরিচালনা করেন। গতকাল শুরুতেই মামলার ৭২ নম্বর সাক্ষী লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়াসমিন আক্তারের জেরা সম্পন্ন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর ৭৩ নম্বর সাক্ষী মেজর রওনক, ৭৪ নম্বর সাক্ষী ল্যান্স নায়েক অজিত কুমার সিংহ ও ৭৫ নম্বর সাক্ষী সিপাহি কামাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেন।
মেজর রওনক জবানবন্দিতে বলেন, দরবার হলে হইচইয়ের পর সবাই বের হয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ভিড়ের মধ্যে তিনি মেজর মোশাররফ হোসেনকে দেখতে পান। মোশাররফ ও তিনি দৌড়ে গিয়ে নূর মোহাম্মদ রাইফেল স্কুলের বেতন দেওয়ার ছোট ছোট খুপড়িতে লুকান। স্কুলের দুই কর্মচারী তাঁদের সহায়তা করেন। বেলা ১১টার দিকে কয়েকজন জওয়ান এসে গালাগাল করে ফিরে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে তিনজন সৈনিক আসে। তারা অস্ত্র তাক করে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। এ সময় তিনি সিপাহি আলতাফ, বাশার ও হায়দারকে চিনতে পারেন। তিনি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন। জওয়ানরা তাঁদের মুঠোফোন কেড়ে নেয় এবং গালাগাল করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা মেজর মোশাররফ ও তাঁকে বারান্দায় বের করে আনে। সেখানে তারা মোশাররফকে গুলি করে হত্যা করে। জওয়ান হায়দার গাড়ি আনতে বলে। গাড়ি এলে তাঁকে তুলে দিয়ে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যেতে বলে। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পর একজন বয়স্ক জওয়ানের কথায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি আরও কয়েকজন চিকিৎসককে দেখতে পান। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত তাঁরা হাসপাতালেই থাকেন। বিকেল চারটার দিকে তিনি পিলখানার ১ নম্বর ফটক দিয়ে বাইরে যান।
জবানবন্দির পর মেজর রওনককে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক হোসেন, আমিনুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন। প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় তিনি কয়েকবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এরপর তৎকালীন বিডিআরের অফিস ক্লার্ক অজিত কুমার সিংহ জবানবন্দিতে বলেন, বিদ্রোহের সময় তিনি অফিসের ভেতরে ছিলেন। জওয়ানদের ভয়ে তিনি বের হননি। তিনি আদালতে কয়েকজন জওয়ানের নাম বলেন। সাক্ষী কামাল উদ্দিনও কয়েকজন সশস্ত্র জওয়ানের নাম বলেছেন। পরে আদালতের কার্যক্রম ২৭ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.